Ads 468x60px

Monday, November 30, 2015

নবনীতার ডায়েরি -১

ক'দিন ধরেই আমার মেজাজটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে। এটা ঘটা করে কাউকে বলারও কিছু নাই। তারপরেও যখন একটু অবসর মিলে তখন মেজাজ খারাপ ভাবটা ফিরে আসে। আমি কখনই নিজের মতের বাইরে গিয়ে কারো সিদ্ধান্ত মেনে নেবার মত মানুষ ছিলাম না। হয়ত খুব বেশি শুনতে হয়েছিল " তুই তো মাইয়া মানুষ " তাই হয়ত জেদ বেশি কাজ করত আমার উপর কিছু চাপিয়ে দিলে যা যৌক্তিক না। ছোট বেলা থেকেই আমার জানা হয়ে গিয়েছিল "আমি ভাল না " "ভাল মাইয়া না "! যখন এসব শুনতাম কিশোরী বেলায় মন কেমন কেমন যেন লাগতো, দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতাম, ভাল খারাপের সংজ্ঞার বোধ চেপে বসে আমার ভেতরটা এলোমেলো করে দিত! কিন্তু ক্লান্তিহীন ভাবে আমাদের সমাজের মানুষ গুলো আমাকে এই পরিণত বয়সে এসেও ভাল খারাপ ন্যায় নীতির শিক্ষা দিচ্ছে। আমার সেসময়ের রাগগুলো প্রিয় বন্ধু তুলির উপরেই গিয়ে পড়ে। আমাকে রাগাবার জন্যই হয়ত ও আরো গম্ভীর হয়ে বলে -আরে মাইয়া মানুষের কি শিখনের কি শেষ আছে? তোরে শিখাইতাছে, তুই শিখতে থাক। লগে আমারেও শিখা!কিন্তু আমি শিখতে চাই না। ওকে বলি -জীবনটা কয়দিনের রে! এইসব প্যানপ্যানানি আর ভাল্লাগে না! সারাটা দিন অফিসের খাটুনি শেষে ঘরে আইসাও দেখি ঘরের ভিত্রে "সমাজ "ঢুইক্যা গেছে। বলে আমি হেসে ফেলি।শুনে তুলিও হাসে। বলে -মানুষ মাত্রই সামাজিক জীব। সমাজের বাইরে কেউ না। সামাজিক হইতে পারলি না বুড়া বয়সেও, আর কবে শিখবি? তোর সমাজ তোরে কি কি শিখাইলো শুনি?আরে ধুর ধুর, বাদ দে। এখন জামাই লইয়া ঘুরতে যামু। লং ড্রাইভ! হু হু হু। তোর জামাই কি করে?
কি আর করব! পিসিতে বইসা গেম খেলে। মন চায় আছাড় মাইরা ভাইঙ্গা ফালাই কম্পিউটারটা!তুলি শোন, আর জ্বালাবি না। এখন ফোন রাখলাম। এখন জামাই নিয়া লুমান্টিক টাইম কাটামু। আমি ফোনের লাইন টা কেটে দেই।কেউ একজন আমার কাল্পনিক সংসারের সুখে সুখি হচ্ছে, এটাও আমার অনেক ছোট ছোট সুখের একটা উপকরণ!আজ অফিস ছুটির আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলাম অফিস থেকে। উদ্দেশ্য জামাই নিয়ে ঘুরাঘুরি আর টুকটাক কিছু শপিং । ব্রেইনটাকে মনে হয় দীর্ঘ সময় রেস্ট দেয়া দরকার। মাথা ভীষণ দপদপ করে অফিসের বিভিন্ন চাপ আর ' সমাজের' চাপে। টুং করে মোবাইলে ফেসবুকের নোটিফিকেশনে দেখলাম তুলির অভিমানী মেসেজ -" অফিসে কাজ জানি তুই একলাই করস! এখনো ব্যস্ত নাকি? ঢং ধরসস, তোর লগে সম্পর্ক শেষ। যাহ্ !"আমার হাসি হাসি মুখ দেখে জামাই ড্রাইভ করতে করতে জানতে চায় হাসির কারণ কি ? বললাম -তুলির মনে হয় মাথা খারাপ হইছে। নিশ্চয়ই ওর জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করছে। তাই আমার উপর তেজ দেখায় ক্যান অরে ফোন দেই না।তো ফোন দিলেই তো পারো!আমিও বলি -আজকেই ভাবছিলাম বাসায় ফিরে ফোন দিবো। বলতে বলতেই ওকে ফোন করি। শুনি ওর ভার ভার হয়ে থাকা গলা। ওকে ক্ষেপাতেই বলি -কিরে স্কুল গার্ল, জামাইয়ের লগে আবার কি লইয়া লাগলি ? ফোনের ওপাশে ওর ফ্যাত ফ্যাত করে কান্না ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাই না। মনে হচ্ছে সিরিয়াস কিছু হয়েছে। তাই আমি একটু গম্ভীর ভাব আনার চেষ্টা করে বলি -কান্দস ক্যান? তোর সমস্যা কি ?ও নাক টানতে টানতে কাঁদে আর বলে তাহামনির আব্বা মনে হয় আমারে ইদানিং অবহেলা করতাছে। কেমন জানি বদলাইয়া গেছে।আমার এত্তো হাসি পায় ওর কথা শুনে! আমি হাসতে হাসতেই বলি , ক্যান তানভীর ভাই তোর কোন দায়িত্বটা পালন করতে আবার ভুইল্যা গেলো শুনি! আর প্রেম কইরা বিয়া করছস, সমবয়সী দুইজনে, তুই এখনো ওরে নাম ধইরা ডাকা শিখলি না। কি তাহামনির আব্বা , তাহামনির আব্বা কইয়া ডাকস!হ, সুখে আছস তো, তুই তো হাসবিই! শ্রাবণ ভাই তো আর আমার জামাইয়ের মতো না। তুই জানস ইদানিং ও আমার মোবাইল চার্জে দিয়া দেয় না, পোলাপাইন গুলিরে পড়তে বসায় না! ঘরে ফির্যা কম্পিউটারে গেম খেলবো নাইলে ঘুমাইব!আমি বলি,ঘুমাইলে সমস্যা কি ?হ, অয় ঘুমাইলে আমার সমস্যা আছে। আমি সারা রাইত ঘুমাইতে পারি না। অয় পাশে থাকার পরেও আমার একলা একলা লাগে। আমারে ফালাইয়া আমার জামাই ঘুমাইব ক্যান? বিয়ার আগে তো ফোনে ফোনে আমারে ঘুম পারাইয়া তারপর ঘুমাইতো। এখন কি বিয়া কইরা সব দায়িত্ব শেষ হইয়া গেছে?
আমি ওকে বলি -শুধুই মাথা গরম করিস না। ও একটু চুপচাপ ধরণের তার মানে এই না তানভীর ভাই তোরে অবহেলা করে!হ, সবাইরেই আমার চিনা আছে। তোরেও ! সারাদিনে একটা ফোন দেস না, ফেসবুকে মেসেজ দেস না। তোর লগে আর কথাই কমু না।ও রেগেমেগে ফোন রেখে দেয়। আমার জামাই জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়। আমি হাসি আর বলি - তানভীর ভাইয়ের কেসও তোমার মতোই। বিছানায় শুইলেই তোমরা কীভাবে ঘুমাইয়া যাও, নাক ডাকো! আর বাকি কাহিনী নাইলে বাদই দিলাম!আমার মনেও অনেক প্রশ্ন আসে, অনেক কিছুর ছুটোছুটি চলতে থাকে। আমি স্টিয়ারিঙে আমার জামাইয়ের রাখা হাতের উপর আমার হাতটা চেপে ধরি, ওকে ছুঁয়ে থাকতে চাই। মাঝেমাঝে ও পাশে থাকার পরেও কেন যেন মনে হয় ওকে আমি মিস্ করছি, কেমন দূরের অচেনা কেউ! কাছে থাকার পরেও প্রিয়তম মানুষেরা কেন যে কখনো কখনো দূরের নক্ষত্র হয়ে যায় জানি না !

চলবে.....................................।।
আমার নাম লাবণ্য।আমার জীবনটা খুব অদ্ভুত ভাবেই বদলে গেছে এই কয়টা মাসে । ভীষণ দুষ্ট আর অগোছালো আমি এখন বেশ শান্ত শিষ্ট । অকারণে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়া একটা মেয়ে বেশ ভাব নিয়ে চলে গম্ভীর ভাবে । আমার এই বদলে যাওয়াটার কারণ মাঝে মাঝে অনুসন্ধান করার চেষ্টা করি । কিন্ত পারি না । হয়তবা ওই দিনের অই ঘটনাই আমাকে একদিনে অনেক বড় করে দিয়েছে । ছোট এক শহরের ভীষণ রকমের চঞ্চল মেয়ে আমি । সারাদিন আড্ডা , গান আর কবিতা । সাথে পড়াশুনার টুকিটাকি । সবার আদরের আর পছন্দের মধ্যে আমার বেড়ে ওঠা । ভাবতে আমি খুব ভালবাসি । চারপাশের মানুষ গুলোর ভালবাসা দেখে আমারও খুব ভাবতে ইচ্ছে করে কেউ একজন অসম্ভব ভালবাসা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে । কোন একদিন কেউ একজন তার শার্টের বোতাম লাগিয়ে দেওয়ার জন্য হাঁকডাক করবে । খুব মমতা নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিবে , আমার পাগলামি দেখে মুচকি মুচকি হাসবে । ভাবতে ভাবতে লজ্জা পাই নিজে নিজেই । কি যে উলটা পাল্টা ভাবিনা আমি ! বেশ কদিন ধরেই দেখছিলাম ও পাড়ার এক ছেলে পেছন পেছন ঘুরছে । পাত্তা দিতাম না । একদিন সামনা সামনি প্রস্তাব ও দিয়ে বসে পথ আটকে । এড়িয়ে গেলাম । এমনিতেই ওই ছেলের গুন্ডা গুন্ডা ভাব আমার একটু ও পছন্দ না । বলে গেল দেখে নিবে ।কি এমন দেখে নিবে ? আমার বয়েই গেল ! সেদিন খুব ক্লান্ত নির্জন একটা দুপুরে প্রতিদিনকার মতই বের হয়েছিলাম কোচিং এ যাওয়ার জন্য । কাঁধে মোটা ক্যাম্বিসের ব্যাগ নিয়ে , কানে হেডফোন গুজে দিয়ে একমনে হাঁটছিলাম । পথে যাওয়ার সময় একটা কাঠ বাদাম গাছ পড়ে । বড় বড় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট বাদাম দেখতে মন্দ লাগে না । ওইদিন ওখানে যেতেই হটাত করে আমার সামনে কিছু মানুষ এসে পড়ে । কিছু বোঝার আগেই আমাকে ওরা ধরে ফেললো । চিৎকার দিতে গিয়ে পারলাম না । মুখে হাত চেপে দিয়ে নিয়ে গেল রাস্তার ওই নির্জন পাশটায় । আমি প্রাণপণে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করছিলাম । আস্তে আস্তে শরীরের সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেল । আমি ওই আঁধারে তলিয়ে গেলাম একসময় । শুধু চোখ বন্ধ হওয়ার আগে ওদের মুখে দেখলাম নিষ্ঠুর পাশবিক একটা হাসি । যখন চোখ মেললাম , তখন প্রায় রাত নেমে এসেছে । ওরা আমার শরীরটাকে নিয়ে ইচ্ছে মত খেলে ফেলে গেছে । খুব কষ্ট করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম । পারলাম না । ধুপ করে পড়ে গেলাম । তারপরও খুব কষ্ট করে হাতড়ে হাতড়ে বাড়ি ফিরে গেলাম । বাড়ির সবাই আমার অবস্থা দেখে আঁতকে উঠল । মা আমাকে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন । বাবা অস্থির ভাবে পায়চারি করছেন আর বলছেন , 'এটা ভাল হল না । ' আমি কিছু বলতে পারছিলাম না । নির্বাক হয়ে শুধু তাকিয়ে ছিলাম ওদের দিকে । তারপর থেকে শুরু হল আমার বিবর্ণ দিন গুলো । আশেপাশের মানুষ গুলোর আমাকে দেখে ফিসফিসানি , মুখ টিপে হাসা , সুযোগ পেলেই বাসায় এসে কথা শুনানো - এসব শুনতে শুনতে নিজের উপর বিতৃষ্ণা চলে আসছে । ওইদিন বাবাও আমাকে দোষ দিল । আমি ই নাকি আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী । খুব ছোট মনে হল তখন নিজেকে । ভীষণ ক্ষুদ্র , নোংরা ! মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে মরে গিয়ে সবাইকে মুক্তি দিই । পারিনা । হেরে যেতে ইচ্ছে করে না আমার ।ইচ্ছে করে ওই পশু গুলোকে খুন করে আসতে । নিজের মাঝে যখন নতুন কার অস্তিত্ব টের পেলাম তখন ও নিজেকে খুব শক্ত করে রেখেছিলাম । আমি ভেঙ্গে পড়বো না , আমি জীবন কে জীবনের মতনই চলতে দেবো । নাই বা হল কোন এক জন সুপুরুষের সাথে দেখা , নাই বা হল ভালবাসাবাসি । জীবনে কিছু থেমে থাকবে না । কারণ - জীবন এক অপরাজেয় কবিতা ।

একটি অনাকাঙ্ক্ষিত কাল্পনিক ভালবাসা দিবস

19 Oct 2015 at 08:56 

  ----মাহমুদা বন্যা

ওই শোন,কাল কিন্তু তুমি নীল রঙের পাঞ্জাবি পড়বে ।আর আমি পড়বো নীল রঙের শাড়ি ।সাথে নীল টিপ ও রেশমি চুড়ি । ঘুম জড়ানো কন্ঠে জানতে চায় আনন্দ -ক্যান কাল কি দিবস?যার জন্য এত সাজুগুজু ! -মানে!তোমার মনে নাই কাল কত তারিখ?কি দিবস?ওই বজ্জাত পোলা,উঠ্ ঘুম থেকে উঠ্ আগে ।তারপর তোরে বলতেছি,কাল কি দিবস! কট করেই লাইনটা কেটে মোবাইলটা খাটের উপর আছাড় মারে অবন্তি । রাগে দুঃখে দুচোখ ঝাপসা হয়ে আসছে তার ।এমন একখান মানুষের সাথে প্রেম করেছে,যে কিনা কিছুই মনে রাখে না । তাকে সব কিছু অবন্তির মনে করিয়ে দিতে হয় ।এতটা বেখেয়ালী ছেলে! সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বলতে পারবে না ।ঘুম ভাঙলো মোবাইলের কলার টিউনে। ঘুমের ঘোরেই রিং টিউনের আওয়াজ শুনে বুঝতে পেরেছে অবন্তি,কে কল করেছে ?আনন্দের কলার টিউনটা আলাদা করে সেট করে রেখেছে সে । -হ্যালো.... -বউ এখনো ঘুমাচ্ছো !আমি নীল পাঞ্জাবি পড়ে বসে আছি সাথে লুঙ্গি! লুঙ্গির কথা শুনেই কিনা কে জানে,অবন্তির ঘুম ঘুম ভাবটা একেবারে উবে গেছে । ধরমড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে ।ঘড়ি দেখলো ১০টা বাজে ।আরি বাপস!অনেকক্ষন ঘুমিয়ে ফেলেছে । -হ্যালো....বউ কি ব্যাপার কথা বলছো না কেনো ?আমি তো রেডি ।বলো কোথায় আসতে হবে ? -তুমি লুঙ্গি পরে আসবা TSC,পাঞ্জাবির সাথে !? ঘোর কাটিয়ে জবাব দিল অবন্তি । -আরে বউ লুঙ্গি হচ্ছে আনকমন পোশাক ।ভেবে দেখো,তুমি শাড়ি পরবে আর তোমার পাশে আমি হাঁটবো লুঙ্গি+পাঞ্জাবি পড়ে ।লুঙ্গির এককোণা হাত দিয়ে উঠিয়ে হাঁটবো তার সাথে মুখে থাকবে মিষ্টি জর্দ্দা মেশানো মশলা যুক্ত পান ।কিছুক্ষন পর পর আমি পিচিক করে পানের পিক ফেলবো আর একগাল হাসবো তোমার পানে চেয়ে ।চিন্তা করতে পারতেছো বউ ব্যাপারটা কেমন..... -চুপ,একদম চুপ...একটা লাথি দিব.... -বউ ,তোমাকে_ _ _ দিব... মুচকি হাসে অবন্তি ।ভেবে পায় না এই অগোছালো ছেলেটাকে ভবিষ্যতে কিভাবে সামাল দিবে সে ।সব সময়ই এলোমেলো !অপরাধ করবে ননস্টপ !আর যদি অবন্তি সেই অপরাধ ধরিয়ে দেয় তবে অনুশোচনার জায়গায় উল্টো রেগে যাবে !তবে সে যখন রেগে যায় তখন পাগলটা এমন সব কথা বলবে যে ,পাগলটার সাথে আর রাগ করে থাকতে পারে না অবন্তি ।ফোনটা রেখে ফ্রেশ হয়ে এলো অবন্তি ।ওয়ারড্রব থেকে যত্নে তুলে রাখা নীল রঙের শাড়িটা বের করলো ।পাগলটার দেয়া শাড়িটি এই দিনে পরবে বলে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে ।গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে তৈরি হচ্ছে অবন্তি.... বাসা থেকে বের হতেই না হতেই আকাশ কালো করে নামলো ঝুম বৃষ্টি ।মুখটা কালো করে আকাশের পানে চাইলো অবন্তি ।বৃষ্টি আসারও আর সময় পেল না ।সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে সে ।যেই বৃষ্টি আল্লাহ্ মালুম কখন থামবে ।ঘড়ি দেখলো সাড়ে এগারোটা বাজে ।আনন্দকে ফোন দিল.... -হ্যাঁ বউ কই তুমি ? -এখনো বাসার সামনে ।তুমি কই? -আমিও বাসার সামনে ।যেই বৃষ্টি বের হবো কিভাবে? -জানিনা...হতাশ কন্ঠে অবন্তি জবাব দেয় । -আমি বলি কি আজ না বের.... -চুপ থাকো ।আমি বলছি আজকে দেখা হবে সো হবে.... অবশেষে দেড় ঘন্টা প্রতিক্ষার পর পুরো প্রকৃতিকে কাক ভেজা করে তবেই থামলো বৃষ্টি ।আনন্দকে রওয়ানা হওয়ার এস এম এস করে নিজেও একটা সিএনজি ঠিক করলো ।ঢাকা শহরের রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলাচল করবে এটা তো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখার নামান্তর!মানিক দি থেকে বেশ ভালোই দূরত্ব টি এস সি'র ।ওর্য়াকশপের কাছাকাছি বেশ লম্ব একটা জ্যামে খুব ধৈর্য সহকারে বসে আছে অবন্তি ।বিরক্ত লাগছে খুব,কিন্তু কিছু করার নেই ।তার বিরক্ত মুখখানা দেখে জ্যাম ছুটে পালিয়ে যাবে না ।তারচেয়ে মনটাকে চাঙা রাখার জন্য কল্পনার জগতে হারিয়ে যাওয়াই ভাল । কৃষ্ণচূড়া লাল হয়েছে ফুলে ফুলে তুমি আসবে বলে.... সত্যিই আজ কৃষ্ণচূড়ার পথটা আগুন রাঙা লাল !সেপথে হাঁটছিল অবন্তি আর আনন্দ । দূর থেকে হঠাত্‍ দেখলে মনে হবে,আগুনের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দুজন । যেনো ভালবাসার কোন কঠিন পরীক্ষা দিচ্ছে!অবন্তি খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আনন্দের বাহুখানা । যেনো ভালবাসার এই কঠিন পরীক্ষাটা দুজনে একসাথে পাশ করে যেতে পারে । যেনো পাশাপাশি এভাবেই চলতে পারে প্রতিটি পথ হাতে হাত রেখে ,হৃদয়ে ভালবাসা মেখে । হঠাত্‍ অবন্তি খেয়াল করলো ওদের দুজনের হাত ধরে মধ্যিখানে আরেকজন হাঁটছে ।একটা পুচ্চি মেয়ে বাবু !!! আনন্দের খুব ইচ্ছা,তার প্রথম সন্তানটা যেনো মেয়ে হয় । পুচ্চিটা কিছুক্ষন পর পর,ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে ফোঁকলা দাঁতে হাসছে আর অজানা,অচেনা,অনর্থক সব শব্দ দিয়ে প্রকাশ করে যাচ্ছে তার আনন্দটুকু । অবন্তি ও খিলখিল করে হাসছে,তার মেয়ের এহেন কর্ম দেখে । মেয়েটা একেবারে আনন্দের মত হয়েছে ।খাঁড়া নাক,লাল টুকটুকে ঠোঁট,দুধে আলতা গাঁয়ের রং.... তবে চোখ দুটো আর হাসিটা পেয়েছে তার ।যেমনটা দুজনে ভেবেছিল ঠিক তেমনই হয়েছে তাদের ভালবাসার ফলসটি..... পিপ পিপ..পপ পপ...তন্দ্রা ছুটে গেছে অবন্তির গাড়ির একটানা হর্ণে । ভাবনায় ছেদ পড়তেই বিরক্তভাবটা আবার ফিরে এলো ।ভাবনাগুলো এত জীবন্ত ছিল যে....ইশঃ মেয়েটার নামটাও রাখা হলো না ! আবার পরক্ষনেই হেসে ফেলল,কল্পনা ছিল এটা ভেবে । আশেপাশে চাইলো,জ্যাম এখনো আগের মতই ।কি ব্যাপার আজ কি হলো ?এত জ্যাম ক্যান ? -মামা কি হয়েছে ?এত জ্যাম কেনো আজ ? সিএনজি ওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো অবন্তি । -আপা,সামনে একটা একসিডেন্ট হইসে ।লোকজন রাস্তা আটকাইয়া রাখসে,সাথে পুলিশ ও আছে । এটা নতুন না ।ঢাকা শহরের প্রায়ই যেকোন যানের চালককে মামা বললে,চালক যাত্রীকে মেয়ে আপা ডাকবে !!! পার্স থেকে মোবাইলটা বের করে আনন্দকে কল দিল । "দুঃখিত ,এই মুহূর্তে আপনার কাঙ্খিত নাম্বারে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না..!" ১বার..২বার..বারংবার একই যান্ত্রিক কন্ঠে একই বাক্য ! হঠাত্‍ কেমন করে উঠলো মনটা ।আগে ও বেশ ক'বার এমন বন্ধ ছিল আনন্দের মোবাইল । কোন বিপদ হয়েছে এমন আশংকায় দেখা যেতো ঠিকই তার একটা না একটা সমস্যা হয়েছে । -না,না,কি ভাবছি এইসব !সবসময়ই এক হবে এমন কোন কথা নেই ।ধূর.... আপনমনেই বলা আপন সান্তনার বাণী অহেতুক ঠেকলো । জোর করে দুঃশ্চিন্তাটাকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করলো । কিন্তু মন বড়ই আজিব !যেকোন চিন্তার ঘটনায় আগে সবসময় খারাপ চিন্তাটিই মাথায় ও মনে আসে। দীর্ঘ দেড়ঘন্টা যাবত্‍ পর জ্যাম মুক্ত হয়েছে। যাওয়ার সময় খেয়াল করলো অবন্তি,রাজপথ রক্তে রঞ্জিত। মনটা খারাপ হয়ে গেলো,কে জানে কার তাজা রক্ত আজ রাজপথ রাঙ্গিয়েছে???? সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসে আছে অবন্তি।তাদের চিরচেনা সেই জারুল গাছটির নিচে... অপেক্ষার প্রহর বড়ই কঠিন।সেই কখন থেকে বসে আছে,আনন্দের কোন খোঁজ নেই!! মোবাইলও বন্ধ!এটা কোন কথা হল!!...... এইদিকে বৃষ্টি থামার পর খোলা রাস্তায় নেমে এসেছিল আনন্দ । গাড়িতে উঠবে বলে দাঁড়িয়ে ছিল বাস স্টপে । একটার পর একটা গাড়ি এসে চলে যাচ্ছে।কিন্তু গতি এতো বেশি দৌড়ে গিয়েও উঠা সম্ভব হচ্ছে না। একসাইডে দাঁড়িয়ে ছিল সে ।কারন ঢাকা শহরের গাড়ি চালকদের জানা আছে তার। কেমন বেপরোয়া গাড়ি চালায় এরা;যেন এক একজন এক বোতল ভায়াগ্রা একাই খেয়ে গাড়ি চালায়!!!! পকেট থেকে মোবাইলটা সবে বের করেছে মাত্র,অবন্তিকে কল দিবে। হটাত কোথা হতে একটা বাস এসে পড়লো...!!! আনন্দের চোখ ছিল মোবাইলের স্ক্রিনে।মুখ তুলেছে উপরের দিকে, ঘাড় ঘুরিয়ে কিছু দেখার আগেই...... শেষবারের মত মা এবং অবন্তির মুখটিই ভেসে উঠেছিল একবার বন্ধ চোখের পাতায়...... অবন্তির দেখা সেই তাজা রক্ত গুলো আর কারো নয়,তার ভালোবাসারই ছিল!!! সেদিন আনন্দের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। সবকিছু অজানা অবন্তি এখনো বসে আছে সেই জারুল গাছটির নিচে অধীর আগ্রহে। তার ভালবাসা আসবে বলে.........!!!

তোমাকে হারানোর ভয়

 18 September 2015 at 10:01

 কাকভেজা হয়ে ঘুরতে মিতুর দারুন লাগে। এই দারুন লাগার মাত্রা আরো বাড়ে যদি নিরবকে ভেজানো যায়। আজকে সে বেজায় খুশী। রিকশায় চড়ে যেতে যেতে মিতু খিলখিল করে হাসে।এত হাসির কি হল?কি করব? তোমার ভেজা মুখটা দেখলেই হাসি পাচ্ছে।নিরবের দিকে তাকিয়ে আবার খিলখিল করে হেসে দেয় মিতু। তারপর আলতো করে ভেজা হাতে নিরবের মুখটা মুছে দেয়। এলোমেলো চুলগুলো আরো এলোমেলো করে দেয়। নিরব কিছু বলে না, নিরব হয়ে থাকে, তবে ভিতরে ভিতরে খুব অনুভব করে প্রতিনিয়ত প্রতিক্ষণে মিতুর প্রতি ভালোবাসা শুধু বেড়েই যাচ্ছে।দুইবার দোয়েল চত্বর ঘুরে রিকশা যখন আবার কার্জন হলের রাস্তায়, ঝুম বৃষ্টি থেমে গেছে। মেঘলা আকাশে আশ্চর্যরকম প্রেম প্রেম ভাব, ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। এ্যাই শুনো, আমি অনেক পড়াশুনা করছি। আর ভাল লাগতেসে না। তুমি কবে আমাকে বিয়ে করবা বলোতো? – এমন অধ্যের্যের স্বরে মিতু কথাটা বলে মনে হবে সে মাস্টার্স পিএইচডি করে ফেলেছে। আসলে পড়ে মোটে অনার্স থার্ড ইয়ার।তুমি পড়াশুনা কর কই? সারাদিন থাকো দেখি মুভি আর এফএম নিয়া। বিবিএ করতে কি পড়াশুনা লাগেনা নাকি? – নিরব মিতুকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করে।দেখো খোঁটা দিবা না। আমার আর ভাল লাগে না এইসব। সিরিয়াসলি বলতেছি। তুমি ব্যবস্থা নাও, অথবা আমি তোমার বাসায় গিয়ে উঠব।এইসব কথা প্রায় প্রতি ঘুরাঘুরির দিনে হয়। মাস খানেক ধরে কিঞ্ছিত বেশী হচ্ছে। নিরব আমলে নেয় না একদম। যা হবার নয় তা নিয়ে কথা বলা অর্থহীণ। তার থেকে এই ভাল। সপ্তাহে দুইদিন মিতুর সাথে ঘুরতে বের হয়, সময়টা ভাল কাটে। বাকী পাঁচ দিন অফিস নিয়ে পড়ে থাকা। দিন চলে যায় যেমন তেমন। মিতুর আসলেই ভাল লাগে না। দিন দিন সে অস্থির হয়ে ওঠে। প্রতি ডেটের আগে ঠিক করে আজ একটা সমাধান করে ছাড়বে। হয় না। নিরবের কাছে আসলে সব এলোমেলো হয়ে যায়। ছেলেটাকে দেখলে এত্ত মায়া যে কেন লাগে? ইচ্ছে করে বুকে জড়ায় রাখতে। সেটা বেচারা কিছুতেই বোঝে না। ২। মিতু জানে আজকে সে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। নিরবকে না জানিয়ে নিরবের বাসায় চলে এসেছে, নিরব অফিসে। নিরবের মা পরীর মত এই উচ্ছ্বল মেয়েটিকে দেখে অবাক হলেন। মিতু আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। সালাম করে সে বলল, আন্টি আমি নিরবকে ভালবাসি। মেয়ের কথা বলার ভঙ্গি দেখে উনি হেসে দিলেন।- তাই! কিন্তু নিরব কখনো তোমার কথা বলেনি। সে কি তোমাকে ভালবাসে?- জ্বী, অবশ্যই ভালবাসে।- কনফিডেন্ট?- ১০০% কনফিডেন্ট।- আচ্ছা, আমি আজকেই নিরবকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিব।- আন্টি আমাকে আপনার কেমন লেগেছে?- খুব ভাল লেগেছে। তুমি চমৎকার মিষ্টি একটা মেয়ে।- না আন্টি আমি জানতে চাইছি, আমাকে আপনার ছেলের বউ হিসেবে পছন্দ হয়েছে কিনা! হাসি হাসি মুখের ভদ্রমহিলা হঠাৎ করে কেমন গম্ভীর হয়ে গেলেন। মিতু অবাক হল। এ কেমন লোকজন! ভালবাসবে ঠিক আছে। পছন্দ হবে ঠিক আছে। কিন্তু বিয়ের কথা বললেই মুখ অন্ধকার। নিরবের মা তখন বলে চলেছেন, নিরব যদি সত্যি সত্যি তোমাকে ভালবেসে থাকে তাহলে কখনোই সে তোমাকে বিয়ে করতে চাইবে না, কখনো না। মিতু ইলেক্ট্রিক শকের মত খেল। এরপরে সে যা শুনতে থাকল তার কতটুকু মাথায় গেল বা বুঝতে পারল তা সে নিজেই জানে না। ৩। আজকে নিরব-মিতুর বাসর রাত। ফুলে ফুলে সাজানো বিছানার ঠিক মাঝখানে মিতুর কোলে শুয়ে আছে নিরব।- মিতু, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।- ঘুমাও, আমি কি তোমাকে ডিস্টার্ব করছি?- নাহ, কিন্তু কেমন যেন টেনশন হচ্ছে। ঘুমিয়ে পড়লে যদি কিছু হয়ে যায়!- বুদ্ধু কোথাকার! আমি কি তোমাকে ছেড়ে পালায় যাব?- নাহ সেটা না। কারো হাত ধরে পালায় যাবার মতন তোমার কেউ নাই।- আর ইউ শিউর?- আই এম ড্যামন শিউর। নাহলে এত ভয় দেখানোর পরেও তুমি আমাকে বিয়ে করতে না।- ইয়েস বুদ্ধু, আমি সারাজীবনেও তোমাকে ছেড়ে যাব না। তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাইতে পার।- তবু টেনশন হচ্ছে।এইবার মিতু বিরক্ত হল। সে কোল থেকে নিরবকে ফেলে দিল। তোমাকে এত আদর সোহাগ করে লাভ নাই। ভীতুর ডিম কোথাকার!কারেন্ট চলে গেল। উফ, এত রাতে লোডশেডিং? অসহ্য! – মিতু বিরক্ত হয়ে বলে।নিরব একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে ছোট্ট টেবিলের মাঝখানে রেখে দেয়। কি মায়াবী পরিবেশ, তাইনা মিতু? এক্কেবারে পারফেক্ট বাসর রাত।মায়াবী না ছাই! এমনিতেই গরম লাগছিল। আর এখন কারেন্ট চলে গেল। উফ!কারেন্ট চলে যাওয়ায় নিরব উৎফুল্ল। তার সাহস কিছু বেড়েছে অন্ধকারে। সে বউ এর পাশে এসে বসে। এই শাড়ী-ভারী গহনা পরে থাকলে গরম তো লাগবেই। এগুলো কি দরকার! আমি হেল্প করব?চুপ, একদম চুপ। আমাকে টাচ করবা না।নিরব হাসতে হাসতে আরো কাছে আসে, আচ্ছা বাবা আমি তোমাকে টাচ করবো না, কিন্তু তুমি আমাকে করতে পারো। কোন অসুবিধা নাই।ইস, শখ কত? এই চলোতো। আমার ভাল লাগতেছে না। চলো তোমাদের ছাদে যাই।আচমকা আবার ভয়টা ফিরে আসে নিরবের মধ্যে। সে ভুলেই গেছিল সবকিছু।না, ছাদে যাওয়া যাবে না। ছাদ তেমন একটা ইউজ হয় না।মানে কি? তুমি ছাদে যাও না? তাহলে রাতে মোবাইলে কথা বলার সময় আমি যখন জিজ্ঞেস করি, কি করো, তখন তুমি বলো, চাঁদ দেখি, তারা দেখি। এগুলো সব ভুয়া? আমার সাথে চাপা মারছ? এত বড় সাহস! আমাকে চাঁদ-তারার কথা বলে রোমান্টিক সাজা, ব্লাকমেইল?আরে না, প্লিজ লক্ষী হয়ে বসো। আমি বুঝায়ে বলতেছি। আমি ছাদে যাই মাঝে মধ্যে একা। ছাদের একাংশে রেলিং নাই। তাছাড়া সন্ধ্যায় বৃষ্টিতে পিছলা হয়ে আছে।ওহ, এতক্ষণে বুঝছি। তোমার ভয় আবার ফিরে এসেছে। উফ অসহ্য। তুমি কি চাও এখানে দম বন্ধ হয়ে আমি মারা যাই? না চাইলে আমাকে এখনি ছাদে নিয়ে চলো। ৪। এক মুঠো স্বপ্ন চেয়ে, হাত বাড়িয়েছিলাম জীবন ছিল বড় বেরঙ, সুর হারিয়েছিলাম আলোর দিশা হয়ে তুমি এলে, আমি বদলে গেলাম কত রাত জাগা, কত দিন গোনা সেই নতুন ভোরের আশায় সুর সেধেছি, গান বেঁধেছি আজ এলে তুমি তাই ... অমাবস্যার রাত। জোছনা রাত হলে ভাল হত, রোমান্টিকতার স্বর্গ নেমে আসত। কিন্তু নিরব চাঁদের দিনক্ষণ গুনে বিয়ে করেনি। তার কোন প্লান ছিল না বাসর রাতে বউকে নিয়ে ছাদে ঘোরাঘুরি করার। সে কিঞ্চিত বিমর্ষ আর একরাশ অজানা আতংক নিয়ে মিতুর হাত ধরে হাঁটছে। হঠাৎ মিতু খিলখিল করে হেসে উঠল। কি ব্যাপার, হাসছে যে?হাসছি তোমার ভয়ের কথা ভেবে। আমার এখন নিজেকে নাটক সিনেমার নায়িকার রোল করছি বলে মনে হচ্ছে। আচ্ছা তুমি এক কাজ কর। তোমার জীবন কাহিনী নিয়ে একটা স্ক্রিপ্ট লিখে কোন পরিচালকের কাছে দিয়ে দাও। জম্পেশ ঈদের নাটক হবে।ধুরো, রসিকতা করো না।উহু কোন রসিকতা না। আই এম সিরিয়াস। কালকেই লিখতে বসবো। তুমি আবার গোড়া থেকে সবকিছু আমাকে বলো, আগে যা বলেছ আমি কিছুই মাথায় ঢুকাইনি।সত্যি শুনবে আবার? হুমমম। আমার প্রথম স্ত্রী সোহানা। সোহানার সাথে বিয়ে একদম হঠাত করে। মা একদিন একটা মেয়ের ছবি দেখাল। অসম্ভব সুন্দরী। মনে হল মডেল হবার জন্য ফটোসেশন করেছে। এত সুন্দরী যে আমি প্রেমে পড়ে গেলাম। আমার থেকেও সুন্দরী? হু বলতে পারব না। আমার আসলে মনে নেই। চেহারা ভুলে গেছি। বুঝছি তুমি খুব চালাক হয়েছ। আচ্ছা যাও কন্টিনিউ করো। ভার্সিটি লাইফে আমার কোন এফেয়ার ছিল না। মা যখন বলল, বিয়ে করবি এই মেয়েকে? আমি দাঁত বের করে বললাম, বিয়ে যখন আগে পরে করতেই হবে তাহলে করে ফেলি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের দিনের আগ পর্যন্ত আমি সোহানাকে সামনা সামনি দেখি নি, কোন কথা হয়নি। শুনলাম মেয়ে ও আমার ছবি/বায়োডাটা দেখে পছন্দ করেছে। নিজের চেহারাসুরত/প্রোফাইলে বিশেষ ভরসা পেলাম না। যোগাযোগের কোন উপায় না পেয়ে বেশ টেনশন নিয়ে বিয়ে করে ফেললাম। তারপর বাসর রাতে একদম বাংলা সিনেমার শুটিং। সোহানা শাবনুরের পার্ট নিয়ে নিঁখুতভাবে বলল, আমি আমার ক্লাসমেট রিয়াজকে ভালবাসি। তারপরের ডায়লগগুলো সব অবিকল সিনেমা থেকে নেয়া। এখন তোমাকে আর বলতে ইচ্ছে করছে না। একটু স্মার্টলি যা বলল, ওর সাথে আমার সম্পর্কটা খুবই গভীর হয়ে গেছে। কিরকম গভীর সেটা আশা করি আপনাকে বুঝায়ে বলতে হবে না।আমি বুদ্ধু টাইপের হলেও ইংগিতটা বুঝলাম, মনে মনে প্রস্তুতি নিলাম। আর যাই হোক সোফায় বা ফ্লোরে ঘুমাতে পারব না। বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে রাতটা কাটায় দিতে হবে। ফোন দিয়ে ওর বয়ফ্রেন্ডকে ভোরবেলা আসতে বললাম। ওদের কক্সবাজার পালায়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দেই। দুইদিন নেটওয়ার্কের বাইরে গিয়ে আবার ফিরে আসলে ফ্যামিলি মেনে নেবে তিনজনে একমত হই। বাকী রাত সোহানার সাথে বিছানায় পাশাপাশি বসে গল্প করি। প্রেমের অভিজ্ঞতা না থাকতে পারে, প্রেমের গল্প শুনতে আমার ভাল লাগে। চমতকার একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেল আমাদের মাঝে। সকাল বেলা যখন বাসার সবাইকে না জানিয়ে ওর বয়ফ্রেন্ডের বাইকে তুলে দিলাম, আমার একবিন্দু খারাপ লাগেনি। বরং মনে হল, শাকিব খানের থেকে আমি যথেষ্ট স্মার্ট। ঝামেলা শুরু হল দুপুর বেলা থেকে। সোহানার বাসা থেকে ফোনে তাকে পাচ্ছে না। পাওয়ার কথাও না। আমাদের বাসায় ফোন আসলে মা ইচ্ছামত কথা শুনায়ে দিল যে তার ছেলের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে, মা কেস করবেন। সবকিছু দেখে আমি হাসতে থাকি। বাসার লোকজন মনে করল দুঃখ অপমানে আমি পাগল হয়ে গেছি। কিন্তু পাগল হবার দশা হল সন্ধ্যাবেলায়। পুলিশ চলে আসল আমাদের বাসায়, আমরা মেয়ে গুম করেছি কিনা দেখতে। সোহানা আর তার বয়ফ্রেন্ডের ফ্যামিলি কেউ তাদের খোঁজ পাচ্ছে না। পরদিন পুলিশ খুঁজে পেল তাদের লাশ। আগেরদিন রোড এক্সিডেন্ট হয়েছিল ঢাকা-চিটাগাং হাইওয়েতে। স্পটডেড হয়েছে চব্বিশজন। হুম ভেরী স্যাড। মিতু হাটঁতে হাঁটতে বলে, আচ্ছা এতে তোমার নিজেকে অপরাধী ভাবার কারণ কি? অপরাধী ভাবার কিছু ছিল না যদি সোহানা আর তার বয়ফ্রেন্ড তাদের ফ্যামিলির কাছে ফিরে যেতে পারত। কিন্তু রোড এক্সিডেন্ট হয়ে মারা যাবার পর নিজেকেই দোষী মনে হল আমার। খুব বিমর্ষ হয়ে পড়লাম। শুধু মনে হত আমার জন্য সোহানা মারা গেল। আমি মনে হয় কাউকে ধরে রাখতে পারব না। তারপর? তারপর আমি খুব একলা থাকতাম, বিষণ্ণ। মাস ছয়েক পরে আমার এক ক্লাসমেট কাম কলিগের সাথে ভাল বন্ধুত্ব হল। ওর নাম রূপা। আশ্চর্যের বিষয় হল, পাঁচবছর একসাথে ক্লাস করলেও আমাদের মাঝে কখনো কথা হয়নি। এক বছর চাকরি করতে করতে মনে হল, এই মেয়েকে আমি অসম্ভব ভালবাসি, তাকে ছাড়া আমার চলবে না। রূপাও আমাকে ভালবেসে বিয়েতে রাজী হল। এক সাথে অফিস করা, তারপর বাসায় ফিরে এক সাথে রান্না করা, ছুটির দিনে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের মেনু টেস্ট করা, আমাদের দিনগুলো কাটছিল স্বপ্নের মতন। নেপালের পোখারায় গেলাম ঘুরতে। সেখানে গিয়ে রূপা প্রথমবারের মত ভীষন অসুস্থ হয়ে গেল। এর আগে রাতে রাতে জ্বর থাকত, ছোটখাট অসুস্থতা থাকত। দেশে ফিরে সবকিছু টেস্ট করে রূপার অসুখটা জানতে পারি। মিতু বিশ্বাস কর, আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছি, জান দিয়ে ভালবেসেছি। তবু রূপাকে বাঁচাতে পারি নি, আমি আমার ভালবাসাকে ধরে রাখতে পারিনি। ৫। অমাবস্যার নিকষ অন্ধকারে এক ভালবাসার কাঙ্গাল যুবক কাঁদতে থাকে। নিজের জীবনের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে নিরবের খেয়াল নেই কখন সে মিতুর হাত ছেড়ে দিয়েছে, তারা কোথায় আছে। হঠাত সম্বিত ফিরে পেয়ে নিরব আশপাশে মিতুকে খুঁজতে থাকে। বুকের মধ্যে ভয়ংকর আতংক ফিরে আসে। মিতুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। খেয়াল করে নিরব দেখে, গল্প করতে করতে হাঁটতে হাঁটতে তারা ছাদের ওইদিকে দাঁড়িয়ে আছে যেদিকে রেলিং নেই। নিরব চিৎকার করে, মিতু তুমি কই? মিতু তুমি কই? মিতু!!! মিতু অন্ধকারের মধ্যে থেকে এসে নিরবকে জড়িয়ে ধরে, এই যে আমি এখানে। তোমাকে একটু ভয় দেখাইছি।নিরব জোরে মিতুকে চেপে ধরে, আমাকে মেরে ফেলতে চাও তুমি? মেরে ফেলতে চাও?মিতু মিষ্টি করে হেসে বলে, নাহ শুধুই ভালবাসতে চাই। ........

Sunday, November 29, 2015

সোনালী ভালোবাসার গল্প লেখকঃ শুভ্র সকাল

 আমার নাম শুভ্র সকাল,আমি একজন অতি সাধারান একজন লেখকআমি নিজের মনের কথাগুলো লিখা মাধ্যমে আমার বন্ধুদের কাছে তুলে ধরতে চাইআমার সবসময়ের চেষ্টা থাকে যেন আমি আমার লিখা গল্পগুলোর মাধ্যমে আমার বন্ধুদের মনে নাড়া দিতে পারিজানি না কতটুকু পারি বা পারব কিন্তু নিজের জীবন দিয়ে হলেও চেষ্টা করে যাবো

    

                                 ১ম-পর্ব


আমার আজকের গল্পের নাম "সোনালী ভালোবাসার গল্প"আমার এই গল্পটি লিখা একজন বিবাহিত মেয়ের ভালবাসা  নিয়ে যাকে আমারা প্রেমের ভাষায় বলি পরকীয়া প্রেমভালবাসা খুবই সুন্দর একটা অনুভূতির নাম তা যে কোনোভাবে হতে পারে বিয়ে পরে অন্য কারো সাথেও হতে পারে তাই বলে যে সব পরকীয়া প্রেমই যে খারাপ হবে তা কিন্তু ঠিক না,কিছু পরকীয়া প্রেম মানুষকে করতে হয় নিজের জীবনটাকে সুন্দর করার জন্যকারন সুন্দর জীবন জাপন করার অধিকার এই পৃথিবীতে সবারই আছেআমার গল্পটিও এমন একটা প্রেমের কাহিনী নিয়ে লিখাআমার গল্পের মুল চরিত্র হলো একজন বিবাহিত মেয়ে যার নাম হলো লাবণ্য খান,লাবণ্য ছোট বেলা থেকে অনেক সুন্দর দেখতে তাই ছোট বেলা থেকে তাকে ভালবাসার জন্য অনেক ছেলেদের লাইন লেগে থাকতোলাবণ্যের রুপ লালসায়ে শুধু যুবকরা নয় বুড়োরাও পাগল ছিলতার বয়স যখন ১৮ বছর তখন সে ভাল লাগাকে ভালবাসা  মনে করে এক ছেলের প্রেমে পাগল হয়ে যায় এবং ১৯ বছর বয়সে পালিয়ে সে ছেলের সাথে বিয়ে করে২ বছরের মধ্যে লাবণ্য কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়তার কিছু দিন পরে লাবণ্যের স্বামী প্রতিনিয়ত ঝগড়া হয়ার কারনে তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়লাবণ্য অনেক একা হয়ে পরে,সে তার মায়ের  কাছে ফিয়ে আসে এবং তার মা তাকে সাদরে গ্রহণ করে নেয়,লাবণ্যের বাবাও একদিন তার মা এবং তাকে রেখে এইভাবে চলে গিয়েছিলো কিন্তু তার যাওয়ার কারন ছিল অন্য আরেকটা মেয়ে মানুষলাবণ্যের মতো এতো সুন্দর একটা মেয়ের জীবনটা এইভাবে নষ্ট হয়ে যাবে ভাবাই যায় নালাবণ্যের বাবা চলে যাবার পর তার মা কিন্তু একা থাকেন নি তিনি পুনরায় বিয়ে করেছেন একজন অনেক ধনী লোককেযিনি লাবণ্যের মাকে অনেক ভালবাসেন ঠিক মেয়ের মতো লাবণ্যকেবড়লোকদের সবচেয়ে বড় রোগ হলো যখনি তারা জীবনে কিছুটা একা হয়ে পরে তখনি তারা খারাপ হয়ে যায় এবং ড্রাগ নিতে শুরু করেলাবণ্যের বেলাও একই ঘটনা ঘটলো,সে তার একা জীবনকে ভুলে থাকার জন্য ড্রাগ নেয়া শুরু করলোড্রাগ মানুষের আপন সত্তাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়লাবণ্যের বেলাও একই জিনিস ঘটলো,লাবণ্যের এমন কিছু ফ্রেন্ড হলো যাদের মধ্যে কিছু ছিলো যারা লাবণ্যের টাকাকে ভালোবাসতো আর কিছু ছিলো যারা শুধু সুযোগ খুঁজতো তার দেহকে ভোগ করার,কিন্তু এমন কেউ ছিলো না যে তাকে প্রেমিক বা বন্ধু হিসেবে ভালোবাসতোলাবণ্য দিন দিন অনেক খারাপ হয়ে যেতে লাগলো তার মেয়ের প্রতি তার ভালোবাসা ড্রাগের কারনে অনেক কমে গেলো,এই টুকু ছোট বাচ্চাকে পালতো বাসার কাজের মেয়েতার এই অবহেলার কারনে উসা দিন দিন অসুস্থ হেয়ে যেতে লাগলো লাবণ্যের মেয়ে নাম হলো উসাউসা দেখতে তার মায়ের মতো বললে ভুল হবে তার থেকেও অনেক বেশি সুন্দরএই ছোট মানুষটাকে যেই এখন দেখে মায়া জন্য চোখ সড়াতে পারে না    

Saturday, November 28, 2015

প্রিয়তমেষু ,


সেদিনের কথা মনে পরে গেলো তুমি ফোন দিয়েই বললে যেন আমি বাসা থেকে বের হই এত মানুষের চোখে ফাকি দিয়ে কিভাবেই-বা বের হব আমি!জানালার পাশে এলাম কোনো রকম এসে দেখি তুমি দাড়িয়ে আছো তোমাকে দেখে কি আমি আর থাকতে পারি বলো!মন মানেনা আর তোমার চোখ গুলো যেন আমাকেই খুজছিল তোমার দৃষ্টি যেন কলিজার ভিতর ঢুকে যাচ্ছিল একটু একটু করে তোমার হাসি যেন হৃদয়ের পাশ দিয়ে দোলা দিচ্ছিল লক্ষ বার সবার চোখে ফাকি দিয়ে দরজা খুলেই ছুটলাম তোমার দিকে
যা হবার হবে আগে তোমাকে চাই তোমাকে বুকে টেনে নিলেই হয়ত বুকের ভিতর ঝর তুফান থেমে যাবে
দেরী ই করে ফেললাম বুঝি!!এসে দেখি তুমি চলে গেছো রেখে গেছো তোমার আনা একটি গোলাপ নিচে পরে আছে গোলাপটি আর তোমারি হাতে লেখা
 
"জাণ তোমার প্রিয় লাল গোলাপটা রেখে গেলাম"

Friday, November 27, 2015

শূন্য অনুভূতি

গতকালের মতো আজও কেমন যেন একটা শূন্য অনুভূতি রয়ে গেছে। সত্যি কথা বলতে কি, আজকের শূন্য অনুভূতিটা গতকালের চেয়ে গাঢ়। বাউলরা গান গেয়ে চলেছে। তাদের বাদ্যযন্ত্রের সুর না চাইলেও শুনতে হচ্ছে। তাদের সুর যেমনই হোক না কেন, বরাবরের মতোই কেমন যেন শূন্য একটা অনুভূতি এনে দিচ্ছে। বাইরে আজও কুয়াশা পড়েছে। কিন্তু অজানা কোনো স্মৃতির উদ্দেশ্যে আমি আজ স্মৃতির পাতা হাতড়াচ্ছি না। কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাচ্ছি। একটু ভালো থাকতে চাচ্ছি।হঠাৎ করেই ভালো থাকাটা বেশ কঠিন মনে হচ্ছে কেন যেন। আর শূন্য অনুভূতিটা এতোটাই গাঢ় রূপ নিয়েছে যে, বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছি, শূন্যই শেষ নয়। শূন্যেরই প্রকারভেদ আছে। হালকা শূন্য, মোটামুটি শূন্য কিংবা ঘন শূন্য। আর অংকের হিসেবে বলতে গেলে বলতে হবে এই মূহুর্তে আবার অনুভূতিটা শূন্য3। গাণিতিকভাবে এটা শুদ্ধ হোক বা না হোক, মানসিকভাবে এটাই এখন সত্যি।

বৃষ্টি ও একাকীত্বের কথা

বৃষ্টি


সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি কিছুটা কমে এসেছে। কিন্তু ঝড়ো হাওয়ার বেগ বেড়েছে। যেন বৃষ্টির কমে যাওয়াটা পুষিয়ে নিতেই বাতাস তার বেগ বাড়িয়ে নিয়েছে।শহরের ব্যস্ত এই মোড়ের চিত্র অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক ভিন্ন। মোড়ের চা-পানের দোকানটা বন্ধ। রাস্তায় এক-দেড় ইঞ্চি পানি জমে আছে। আশেপাশের টিনশেড বাড়িগুলোর টুয়া থেকে সমানে বৃষ্টির পানি পড়ছে সেই ইঞ্চিখানেক জমে থাকা পানির উপর। খানিকটা ঝর্ণার মতো সেই শব্দের সঙ্গে যোগ হয়েছে টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ। আর সেই সঙ্গে বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজ তো কান পর্যন্তই পৌঁছে যায়।এসব কিছু শোনা গেলেও দেখা যাচ্ছে না ঠিকভাবে। সন্ধ্যা নেমে যাওয়ার পর থেকে দিনের আলোও প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে কমে এসেছে। এখন কেবল অদ্ভূত এক গাঢ় নীল আবছা আলোয় মোড়ের এই বৃষ্টির ধারা দেখা যাচ্ছে।শহরের বুকে এমন অবাস্তব ও অবিশ্বাস্য এক মূহুর্তে একলা হেঁটে চলেছে অর্পি। হাঁটার গতি দেখেই বলে দেয়া সম্ভব গভীর কোনো চিন্তায় মগ্ন। এই সময়টায় এখানে এমন দৃশ্য দেখলে সবারই এক মূহুর্ত দাঁড়িয়ে উপভোগ করার কথা। কিন্তু অতিপ্রাকৃতিক এই দৃশ্য উপভোগ করার মতো মন-মানসিকতা যে অর্পির নেই। তাই প্রকৃতির এই অপরূপ চিত্র অর্পির নজরের বাইরেই থেকে গেলো।অর্পির এই খারাপ আবহাওয়ার দিনে বাসা থেকে বের হওয়ার কোনো প্ল্যানই ছিল না। ছোট বোনের কাছ থেকে সারাদিন টিভির রিমোট লুকিয়ে রেখেছে সন্ধ্যার পরের কিছু নাটক দেখবে বলে। কিন্তু হঠাৎই ওর মন খারাপ হয়ে গেল। অনেকগুলো ভাবনা মাথায় এসে জড়ো হলো। কেন যেন ওর নিজের অস্তিত্বই অসহ্য লাগতে শুরু করলো। এসব থেকে স্বস্তি পাওয়ার আশায়ই বাসায় বান্ধবীর বাসায় যাবে বলে বেরিয়ে এসেছে ও।কিন্তু ও জানে ওর গন্তব্য কোথাও না। বৃষ্টি না কমলে হয়তো বেরই হওয়া হতো না। বৃষ্টি কমায় এই দমকা হাওয়া ও টুপটাপ বৃষ্টির মাঝে হাঁটতে ভালোই লাগছে। তাই সে হাঁটছে। বৃষ্টির বেগ না থাকায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ওর পায়ের আওয়াজ কেমন যেন এক ধরনের ছন্দের সৃষ্টি করেছে। মিনিট দশেক হাঁটার পর এই একলা পথ চলায় অর্পির সঙ্গী হয়ে উঠলো সেই ছন্দময়ী আওয়াজ। এক মূহুর্তের জন্য ও দাঁড়িয়েছিল, আর সঙ্গে সঙ্গেই যেন নীরবতা ওকে ঘিরে ধরেছিল। তাই দম না দিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করেছে সে।গত ক’দিন ধরেই কেন যেন কোনোকিছুতেই অর্পির আর মন বসছে না। ওর জীবনে না পাওয়ার সংখ্যা খুবই কম। দারুণ এক পরিবারে জন্ম ওর, অসাধারণ সব মানুষ ওর বন্ধু মহলে, কিন্তু তবুও কেন যেন মনে হচ্ছে এর সবই অর্থহীন। হঠাৎই কাছের মানুষগুলোর সব কথাবার্তা, কেয়ার নেয়া, সবকিছু মেকি মনে হচ্ছে। মা সকালে এসে নাস্তা সাধলে মনে হচ্ছে ঢঙ করছে। ওর সবচেয়ে ভালো বন্ধু সিমি ওর জ্বর শুনে সারাদিন এসে পাশে বসে থাকার সঙ্গে সিমির নিজস্ব কোনো স্বার্থ জড়িত বলে মনে হয়েছে। দিনশেষে এই সব ভাবনার জন্য নিজেকেই চরম অপদার্থ বলে নিজের অস্তিত্বের জন্যই রাগ লাগতে শুরু করেছে ওর।কী হয়েছে ওর? হঠাৎ কেন এতো বদলে যাচ্ছে? ওর আশেপাশের মানুষগুলো তো বদলায়নি। তাদের প্রতি অর্পির দৃষ্টিভঙ্গি কেন এতো বদলালো? বদলাবেই যখন, কেনই বা তা খারাপ দিকে যাবে?এমনই শত প্রশ্নের মাঝে ডুবে যখন বৃষ্টিজমা গলতে পা ডুবিয়ে হাঁটছে অর্পি, তখন পাশের এক হোটেল থেকে ডাক এলো, “চা খেয়ে যান আপা! এই গরমে চা অনেক ভালো লাগবে। কফিও আছে।”বয়স্ক লোকটার দিকে একবার কেবল তাকালো অর্পি। আবারও নীরবতা জেঁকে ধরবে এই ভয়ে হাঁটা বন্ধ করলো না। পরমূহুর্তেই যেভাবে মাথা নিচু করে হাঁটছিল, সেভাবে হাঁটতে শুরু করলো। প্রশ্ন জর্জরিত মন মূহুর্তেই আগের অবস্থায় ফিরে গেল। যেন এইমাত্র ঘটা ঘটনা কখনো ঘটেইনি।অর্পির হেঁটে যাওয়া দেখে হোটেলে লোকটি দ্বিতীয়বার আর ডাকলো না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তার আত্মসম্মানবোধও কিছুটা বেড়েছে। চা খেতেই তো ডেকেছে। মেয়ের বয়সী মেয়েটার এতে নিজেরও ভালো লাগবে, তারই দু’টো পয়সা আয় হবে। এতে এমন ভাব দেখিয়ে না শোনার ভান করার কি দরকার ছিল!অথচ অর্পি কোনো ভাব দেখায়নি। সাধারণত ও সবার সঙ্গে খুব মিশুকভাবে কথা বলে। এতে করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে যে পড়তে হয়নি তা নয়। কিন্তু তবুও ও ভালো ব্যবহার করে সবার সঙ্গে। কিন্তু আজ ওর মন ভীষণ খারাপ। পাড়ার এক হোটেলে থাকা বৃদ্ধের তা বোঝার কথা না। সবাই নিজের অবস্থানে থেকেই আরেকজনকে বিচার করে। আরেকজন কী অবস্থায় আছে, তা ভেবে দেখার প্রয়োজন কেউ বোধ করে না।অন্ধকার ততক্ষণে জেঁকে ধরেছে অর্পিকে। এই রাস্তায় আর একা হাঁটা নিরাপদ বোধ করলো না। কেন হঠাৎ তার মনে এমন পরিবর্তন এলো, কেন কোনোকিছুই আর তার ভালো লাগছে না, কেনই বা এই খারাপ আবহাওয়ায় বাসা থেকে বেরিয়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটাহাঁটি করলো, এর সব কিছুকে রহস্য রেখেই আবার ফেরার পথ ধরলো সে।মানুষ কিছু কথা তার সবচেয়ে আপনজনের কাছ থেকেও গোপন রাখে। আবার কিছু কথা আছে, যেগুলো নিজের কাছেও গোপন রাখে, যেগুলোর উত্তর খোঁজাখুজি করে না। থাক না, সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে লাভ কী! মন খারাপের মূহুর্তগুলো শেষে কেবল বৃষ্টিমুখর এক সন্ধ্যার উদ্দেশ্যহীন হাঁটাহাঁটির করে সময় নষ্টের বেশি কিছু হবে না।
আবার কে জানে, হয়তো কারো কারো কাছে সেই উদ্দেশ্যহীন হাঁটাহাঁটিই মন ভালো করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট!!
জীবনের নিঃসঙ্গ বন্ধুর পথ চলতে চলতে
আকস্মিক তার সাথে দেখা।
অজানা, অচেনা
তবু যেন কত পরিচিত,
যুগ জন্মান্তরের চেনা।
ভাবি এই বুঝি আমার ঠিকানা,
এখানেই বুঝি পথচলা শেষ।
এখানেই বুঝি ভালবাসার ছায়ায় বিশ্রাম
অবিরাম বিশ্রাম।
কিন্তু সব ভাবনা কি সত্যি হয়,
একদিন কাছে এসে ও কাছের মানুষ হারিয়ে যায়।
আবার এই আমি সেই আমি হয়ে যাই।
অসহায়,নিঃসঙ্গ,বিপন্ন।
লক্ষ্যবিহীন শুরু হয় আবার পথচলা।
যে যায় সেকি ফিরে আসে।
আসে না।
আসবে না একম ও তো বলা যায় না।
আসতে ও তো পারে।
এটি যুক্তির কথা।
বাস্তবতা এই–
তার সন্ধান আর মেলেনি।
ফিরে আসবে একথা ভেবে কল্পনায় সুখ
পাওয়া ও যেতে পারে।
বাস্তবে নয়।
তখন বুঝতে পারি, বেশ বুঝতে পারি
সে আর ফিরবে না…
অনন্তকাল প্রতীক্ষার নামই বুঝি ভালবাসা ।।
- See more at: http://banglablog.evergreenbangla.com/sfk505/1360/#sthash.vNmSlbXf.dpuf
জীবনের নিঃসঙ্গ বন্ধুর পথ চলতে চলতে
আকস্মিক তার সাথে দেখা।
অজানা, অচেনা
তবু যেন কত পরিচিত,
যুগ জন্মান্তরের চেনা।
ভাবি এই বুঝি আমার ঠিকানা,
এখানেই বুঝি পথচলা শেষ।
এখানেই বুঝি ভালবাসার ছায়ায় বিশ্রাম
অবিরাম বিশ্রাম।
কিন্তু সব ভাবনা কি সত্যি হয়,
একদিন কাছে এসে ও কাছের মানুষ হারিয়ে যায়।
আবার এই আমি সেই আমি হয়ে যাই।
অসহায়,নিঃসঙ্গ,বিপন্ন।
লক্ষ্যবিহীন শুরু হয় আবার পথচলা।
যে যায় সেকি ফিরে আসে।
আসে না।
আসবে না একম ও তো বলা যায় না।
আসতে ও তো পারে।
এটি যুক্তির কথা।
বাস্তবতা এই–
তার সন্ধান আর মেলেনি।
ফিরে আসবে একথা ভেবে কল্পনায় সুখ
পাওয়া ও যেতে পারে।
বাস্তবে নয়।
তখন বুঝতে পারি, বেশ বুঝতে পারি
সে আর ফিরবে না…
অনন্তকাল প্রতীক্ষার নামই বুঝি ভালবাসা ।।
- See more at: http://banglablog.evergreenbangla.com/sfk505/1360/#sthash.vNmSlbXf.dpuf

সময়ের অপেক্ষা

boy

সব কিছুর একটা সময় আছে শুভ্র জানে। তবে আর কত দিন সেই সময়ের অপেক্ষা করতে হবে তা শুভ্রের জানা নেই। একটু পরে বন্ধুদের সাথে হয়তো অনেকটা দূরেই যাবে, ফিরবে কবে তা না জানা নেই। একটা চিঠির উত্তর দেয়া খুব দরকার তবে সাদা কাগজ না পাঠানোই ভালো। তাই সেটিও শুভ্র রেখে দিয়েছে, সঠিক সময়ের অপেক্ষায়।। গাড়িটা এসি হলেও শুভ্র বলে অফ করিয়েছে। তপু ওর কথায় কখনো অমত করেনি। হাতের কনুইটা জানালার বাইরে রেখে শুভ্র ভাবছে। পিছনে বসা ছেলেগুলো শুভ্রের চেনা নয়। একজনকে আগে দেখেছে। বাকিদের সম্পর্কে সঠিক কিছু বলতে পারবে না। তপু সাথে মাঝে মাঝেই বেড়িয়ে পড়ে শুভ্র। তবে এতো অপরিচিতদের মাঝে আগে কখনো পড়েনি। শুনেছে যে আরও অনেকেই আসছে। তাদের চিনবে বলেও শুভ্র আশা করে না।ঘরটা শুভ্রের অনেক পছন্দ। সূর্যের আলোটা সোজা ঘরে এসে পড়ে। তপুর তা পছন্দ না হলেও এ ঘরটাতেই থাকে। তপুদের ফার্ম হাউসটা বিশাল। দো’তলার এই ঘরটিতে এসেই তপু গড়িয়ে পড়েছে। বাকিরাও হয়তো যে যার ঘরে। আরও যাদের আসার কথা তারা এখনো আসেনি। শুভ্রের কলমটা ওর ডায়েরির অপেক্ষায় ছিল। লেখা শেষে শুভ্র গোসলটা সেড়ে নেয়, চেনা পরিবেশে অচেনা হয়ে যায়।অনেক বলার পরেও শুভ্র নিচে নামতে রাজি হয় না। তপু একটা পার্টির আয়োজন করেছে। গানের শব্দ না শুনে উপায় নেই। শুভ্রের বাংলা গান ছাড়া ভালো লাগে না। নিজের গিটারটা নিয়ে টুং টাং করতেই চোখ পড়লো নিচের পরিপাটি আয়োজনে। জানালা দিয়ে পুরোটাই দেখা যায়। অনেক মানুষ সেখানে। শুভ্রের চেনা কেউ নেই। না গিয়ে কিছুটা ভালোই করেছে।দূর থেকে মানুষের চলাফেরা দেখলে কিছু অভিজ্ঞতা হয়। শুভ্র তার একলা অধিকারী। যেমন একটি ছেলে গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত মুখে দেয়নি। শুভ্র বাদে হয়তো তা কারো চোখে পড়েনি। কাউকে দেখে থমকে যাওয়ার মতো ছেলে শুভ্র না। তবে হঠাৎ আর চোখ সরাতে পারলো না। সবার সাথে বেশ আনন্দে মেতে আছে মেয়েটি। তার দিকে তাকিয়ে থাকাই যেতো তবে সে যে এতো তাড়াতাড়ি উপরে তাকাবে শুভ্রের তা জানা ছিল না। সময়ের অপেক্ষাটা হয়তো একটু বেশিই লম্বা।গিটারটা রেখে শুভ্র তার কলমটাকে সঙ্গী করে নিল। রাত গভীর পার্টিটা চলছিল। মাঝে তপু বার’কয়েক এলেও শুভ্র এর মন ভাঙ্গেনি। সে নিচে যায়নি। সে তার মতই ঘরে রয়ে গেছে। ঘুমাবার জন্য এতদূর না এলেও হত। এই ভেবে শুভ্রের আর ঘুম হল না।দরজার শব্দ শুনেই শুভ্র তপুর উপস্থিতি আশা করল। আশার আলো নিভিয়ে সেই মেয়েটির আগমন শুভ্রের ভাবনায়ও ছিল না। ঠিকমত হাঁটতে না পারলেও দুলতে দুলতে মেয়েটি কাছে এসে দাঁড়ালো। মুখের উপর সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে ধপাস করে পড়ে গেলো। শুভ্র এর জানা ছিল সময়টা এখন তার নয়। তাই তো পাশে পেয়েও বলা হলো না কথা, হলো না পরিচয়।ঘুম থেকে উঠেই শুভ্রকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখার আশা হয়তো মেয়েটি করেনি। তবে সব মনে পড়ায় তার দুঃখিত হবার চেষ্টা শুভ্রের ভালো লাগে। কফির মগটা হাতে দিয়ে শুভ্র বেড়িয়ে যায় নামটা তার অজানাই থাকলো। নিচে নেমে অবশ্য মেয়েটিকে জানালায় দেখা গেছে। তবে এ নিয়ে আর শুভ্র ভাবেনি।দরজায় পড়ে থাকা চিঠিটা শুভ্রকে ফিরিয়ে আনলো। তপু বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে গেছে। শহরের এই বদ্ধ ঘরে শুভ্র ফিরে আসতে চায়নি। মায়ের কাছে এবার উত্তর দিতেই হবে। ভাবনার সেই ধোঁয়াটে মধ্যরাত থেকে বেড়িয়ে গুছিয়ে চিঠিটা লিখতেই হবে। দরজায় কে যেন এসেছে। বাড়িওয়ালা আবারো টাকা চাইবেন।।

একটি অসম্পূর্ণ চিঠি





(১)
বাসা পাল্টানো যে বিশাল ঝামেলা সেটা এবার আমি হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। কিন্তু কিছু করার ছিল না। ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে। ওদের জন্য আলাদা রুম দরকার। তাছাড়া গ্রাম থেকে আজকাল প্রায়ই আত্মীয়স্বজন আসছে। একটু বড় বাসা না হলে চলছিলই না।
নতুন যে বাসাটায় উঠলাম সেটা খালিই পড়ে ছিল। আমরা দু’দিন আগেই ট্রাকের ওপর মালপত্র বোঝাই করে এখানে চলে এসেছিলাম। শুরুতে তো ট্রাকই খুঁজে পাই না! মহা ঝামেলার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। পরে অফিসের কলিগেরা হেল্প করলো। তারপরও ঝামেলা হল। এই ভারী ভারী ফার্নিচার দেখে ট্রাকের সাথে আসা কুলিরা প্রথমে বুঝতেই পারেনি ওগুলো অতো ভারী হবে! সব পুরনো আমলের ফার্নিচার। আমার দাদার আমলের। এখন এসব জিনিষ আর পাওয়াই যায় না। ওরা তো আমার কাঠের আলমারি নাড়াতে গিয়েই বেঁকে বসলো। বলল, চারজন লোকে এই ভারী আলমারি নামানো সম্ভব না। আরও লোক লাগবে। আরও লোক মানে, আরও টাকা।
আমি বললাম, আমি আর একটা পয়সাও বেশী দেব না।
লোকগুলো আমার কথা শুনে গাড়ি নিয়ে চলেই যাচ্ছিল! আমি আবার কাঁধে পিঠে আদর করে ওদের ফেরালাম। আরে বাবা, দু’চার টাকা বেশী নিবি, তো নিবি। তাই বলে আমি একটু দরদাম করতে পারবো না? এতো রাগ করলে চলে?
এখানে এসে ঘরদোর গোছাতে গোছাতেই পাক্কা তিন দিন লেগে গেল। জিনিষপত্র তো আর কম না! সেদিন খাটটা শেষ বারের মতো টেনে হিঁচড়ে জানালার কাছে নিয়ে পার্মানেন্টলি সেট করার পর বউকে বললাম, আর না। আমি বারান্দায় গিয়ে বসলাম তুমি আমাকে এক কাপ চা দাও ওখানে। বলা হয়নি, সুন্দর একটা বারান্দা আছে এই বাসাটায়। সত্যি কথা বলতে কি, বারান্দাটা দেখেই বাসাটা আমার পছন্দ হয়ে গিয়েছিল।
খাট নাড়াতে গিয়েই খাটের নিচ থেকে একটা দোমড়ানো চিঠি খুঁজে পেয়েছিলাম। বেশ বড় সড় চিঠি। সম্ভবত বেশ কয়টা পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। চিঠিটা হাতে করে বারান্দায় নিয়ে এলাম। ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং লাগছে। আজকাল তো লোকজন চিঠি লেখেই না। আর চিঠির বিষয়বস্তুও বেশ গুরুগম্ভীর বলে মনে হচ্ছে। খাট নাড়াবার সময় পুরোটা পড়ার সুযোগ পাই নাই। এখন চিঠিটা পড়া যেতে পারে...
(২)
“...কেমন করে হয় আমি জানি না। তুমি চলে যাবার পর আমার কিছুদিন খুব ভালো কেটেছিল। আমার মনে আছে, দশ-বারোজন বন্ধু বান্ধব মিলে সুন্দরবন চলে গিয়েছিলাম। সেখানে ছিলাম প্রায় সাত দিন। সুন্দরবনের সেই জঙ্গলের মধ্যে সাত দিন! চিঠিতে তোমাকে সেই গল্প বলে শেষ করা যাবে না।
তারপরও একটা দিনের কথা না বলে পারছি না। পাথর ঘাটা থেকে আমরা একটা স্পীডবোট ভাড়া করেছিলাম। আমাদের সাথে যে গাইড ছিল সে জানালো, এই ট্রলারের চালক সিরাজ মিয়া নাকি সুন্দরবনের নাড়িনক্ষত্র জানে। গভীর অমাবস্যার রাতেও নাকি সে সুন্দরবনের খালগুলোকে হাতের তালুর মতোই স্পষ্ট দেখতে পায়। এই সিরাজ মিয়াকে রাজী করতে পারলেই আমরা একমাত্র বাঘের স্বর্গরাজ্য বাগদিতে পৌঁছাতে পারবো। এই বাগদির কথা আমরা আগে শুনি নাই। অন্য কেউ নাকি সেখানে যেতে রাজী হবে না।! আপাতত সিরাজ মিয়া আমাদের নিয়ে সুন্দরবনের সেফ জোন থেকেই ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে – এ রকমই কথা হয়েছে। অনেক ধরাধরির পর সিরাজ মিয়া রাজী হল।
কালীর চরের পাশ দিয়ে এক পাশ দিয়ে চলে গেছে মালঞ্চ নদী, আরেকপাশ দিয়ে অর্পনগাছিয়া নদী। আমরা মালঞ্চ নদী দিয়ে যখন ঢুকলাম তখন রাতে হয়ে আসছে। নদীর দুপাশে গহীন জঙ্গল, সেখান থেকে কিছুক্ষণ পরপর অদ্ভুত সব শব্দ ভেসে আসছে। পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দের সাথে মিশে গিয়ে আমাদের শহুরে কানে সব কিছুকেই অলৌকিক মনে হচ্ছিল। সেরাতে পূর্ণিমা ছিল কিনা সেটা মনে পড়ছে না। তবে আকাশে চাঁদ ছিল। মেঘ ছিল না বলে সেই অসম্পূর্ণ চাঁদের আলোতেই সব কিছু বেশ ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছিল। নদীর পাড়ে থকথকে কাঁদা, ভাটার সময় কাঁদার মধ্যে গেঁথে যাওয়া কেওড়া গাছের ন্যাড়া শ্বাসমূলগুলোকে দেখাচ্ছিল পাতাল ফুঁড়ে বের হয়ে আসা ভূতের হাতের মতো।
নদীর ধার ঘেঁষে গভীর রাতে আমাদের স্পীডবোট প্রায় নিঃশব্দে চলতে লাগলো। রাতের বেলা খালের ভেতরে ঢুকলে নাকি ঝামেলায় পড়তে হবে। সেজন্যই অপেক্ষা। ঠিক যখন ভোর হয়ে আসছে, তখন সিরাজ মিয়া আমাদের জানালো এবার আমরা বেলকুচিঁ খাল দিয়ে সুন্দর বনের গভীরে প্রবেশ করবো। সবাই যেন টাইট হয়ে বসি। বেলকুচিঁ খাল বেয়ে আমরা পড়বো ঘিয়া খালে। সেই ঘিয়া খাল ধরে ঘন্টাখানেক এগুলোই বাগদী। ভাগ্য ভালো থাকলে এর মধ্যেই বাঘের দেখা পেয়ে যেতে পারি।
সিরাজ মিয়ার কথা শুনে আমরা সবাই ঘুম তাড়িয়ে নড়ে চড়ে বসলাম। খাল দিয়ে ঢুকেছি দশ মিনিটও হয়নি, এমন সময় রাব্বানি আঙ্গুল তুলে আমাদের একদিকে দেখালো। মুহূর্তেই আমাদের ঘুম জড়ানো চোখের ওপর থেকে ক্লান্তির ছায়াটা মুছে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নিল সম্ভ্রম মেশানো বিস্ময়।
খালের পাড়ের দিকে গাছ গাছালি এদিকে একটু কম। কাঁদার ওপর লাল কাঁকড়ার ঝাঁক। উঁচু উঁচু কেওড়া গাছের গুঁড়িতে জোয়ারের সময় ভেসে আসা কাঁদা শুকিয়ে ধূসর হয়ে আছে। সেই ধূসর গাছের গুঁড়ির ভেতর দিয়ে নিশ্চিন্ত ভঙ্গীতে হেঁটে যাচ্ছে কালো হলুদের ডোরা কাঁটা এক রাজকীয় বেড়াল! দৃশ্যটা এখনও চোখের সামনে ভাসে!
তোমাকে খুব মিস করছিলাম মনে মনে। এই রকম একটা অ্যাডভেঞ্চারে যাওয়ার খুব শখ ছিল তোমার। কিন্তু আমার রাগ তখনও পড়েনি। সত্যি বলতে কি, তখন তোমার কথা মনে পড়াতে নিজের ওপরই রাগ লাগছিল। অবশ্য আমি তখনও জানতাম না তুমি সত্যিই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারবে। মজার কথা কি জানো? সেই যে রফিক নামের ছেলেটা। যাকে নিয়ে আমাদের সম্পর্কটা বেশ কিছুদিন ধুঁক ধুঁকে এই তিক্ততায় পৌঁছে গেল, সেই রফিককে দেখলাম সারা রাস্তা কার সাথে সারাক্ষণ যেন ফোনে কথা বলছে। রফিক সেই মেয়েটাকেও ভালবাসতে পারেনি।
ওখান থেকে ফিরে আসার পর বেশ কিছুদিন আমি ইচ্ছা করেই তোমার কোন খোঁজ খবর নেইনি। নিজের ইগোর কাছে পরাজিত হতে ইচ্ছা করছিল না। এখন ভেবে খুব আফসোস লাগে। ইশ! তখনও সময় ছিল! শুধু যদি নিজেকে শুধরে নিয়ে তোমার হাতটা টেনে ধরতাম! তুমি কি হাতটা ছাড়িয়ে নিতে পারতে? আমার মনে হয় না। সেক্ষেত্রে আমাকেও আর এই ছন্নছাড়া জীবন যাপন করতে হতো না। জীবনটা হয়তো সুন্দরই হতো।
আমি যখন বুঝলাম তোমাকে আর ফিরে পাবো না, তার পরবর্তী ছয়টা মাস আমি খুব পাগলামি করে বেড়িয়েছি। ইউনিভার্সিটি যেতাম না, ক্লাস করতাম না। আজে বাজে কিছু বন্ধু জুটেছিল। নেশা করা শিখে গেলাম খুব দ্রুত। বাবার কাছ থেকে কেড়ে কুড়ে টাকা নিয়ে গাঁজা খেতাম। মদ খেতাম। ওসব করতে গিয়েই মানিব্যাগে রাখা তোমার ছবিটা একদিন হারিয়ে ফেললাম। ঠিক সে দিনই স্পষ্ট করে বুঝলাম আমি তোমাকে হারিয়েছি। বুঝলাম আমার কি দোষ ছিল। তারপরই নেশা ভাং ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমার মনের মধ্যে যে যন্ত্রণা জন্ম নিয়েছিল সেদিন সেটা নেশা করে কাটানো যায় না। আসলে সারাজীবন আমি কোন কিছুই বুঝে করিনি। তখন আমার কাছে সব কিছুই ছিল। যখন বুঝলাম তখন আর কোথাও কিছুই নেই।”
চিঠির বেশ কিছু অংশ এরপর নষ্ট হয়ে গেছে, অনেক চেষ্টা করেও কিছুই উদ্ধার করা গেল না। আমি এস সময় হাল ছেড়ে দিয়ে বাকি অংশটুকু পড়তে লাগলামঃ-
“জানো, এই কয়দিন ধরে আমি আমার বাউন্ডুলে জীবনকে একটা রুটিনের মধ্যে নিয়ে এসেছি। সময় মতো অফিস শেষ করি। অফিস থেকে ফিরেই এখন আর আড্ডা দিতে বের হয়ে যাই না। জামাকাপড় বদলে আমি একটা গোসল দিয়ে ফেলি। জঘন্য একটা গরম পড়েছে। গোসল করার পর নিজেকে বেশ ফুরফুরে লাগে। ফুরফুরে মেজাজ নিয়েই সন্ধ্যার নাস্তা করি। নাস্তার পর এক কাপ চা। চা-টা নিজেই বানাই। আমার আবার কড়া লিকারের চা পছন্দ। লিকারের মাপটা ঠিকঠাক না হলে চা খেয়ে আরাম নেই। চা নিয়ে সোজা বারান্দায় চলে যাই। রকিং চেয়ারে দোল খেতে খেতে চা খাই আর মনে মনে বলি – আহ!
চা খাওয়ার পর হঠাৎ করেই একটা অস্থিরতা চলে আসে। এই সময় একটু আড্ডা দিতে ইচ্ছা করে। তবে আমি যেহেতু আমার বেখাপ্পা জীবনযাপনকে একটা রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি সেহেতু এসব আজেবাজে চিন্তা বাদ দিয়ে আমি একটা বই পড়তে বসি অথবা গানটান শুনি। এখন পড়ছি ভল্গা থেকে গঙ্গা। সেই প্রাগৈতিহাসিক সময়ের মানুষের জীবনযাত্রা বোঝার চেষ্টা করছি। বইটা পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে একটু আনমনা হয়ে পড়ি বলে তাল হারিয়ে যায়। বইটা ভালো। খুবই ইন্টারেস্টিং। তবে আমি একটু ধীরে সুস্থে পড়ছি। ভালো বই ধীরে সুস্থে পড়াই নিয়ম।
সমস্যা হয় যখন রাত নয়টা দশটার দিকে আমার নিজেকে একটু নিঃসঙ্গ লাগতে শুরু করে। তখন আমি শীতল পাটি আর একটা বালিশ কোলে করে ছাদে চলে যাই। সাথে থাকে গান শোনার সরঞ্জাম আর একটা খোলা আকাশ। অজস্র তারা ভরা ঝকমকে আকাশটার শরীর পিছলে উড়ে উড়ে চলে যেতে থাকা প্রজাপতি মেঘ আর হু হু করে বয়ে যাওয়া মাতাল হাওয়ায় আমার কেমন যেন উদাস উদাস লাগে। গভীর রাত পর্যন্ত আমি কল্পনার সিড়ি বেয়ে কার কার আকাশে যেন ঘুরে বেড়াই।
আজকে সারা আকাশ গুনে দেখলাম। মনে হল চার পাঁচটা তারা বেশীই আছে। অবশ্য তারা কিছু কমও থাকতে পারে। আজকাল আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি কোন কূল কিনারা খুঁজে পাই না। তাই রুটিন ধরে আমি প্রতি রাতে একটা আকাশ খুঁজে বেড়াই। কিন্তু তোমার আকাশটা কেন জানি আমি কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। সময় পেলে তোমার আকাশটা নিয়ে একদিন আমার কাছে চলে এসো! রুটিন ধরে একা একা তারা গুনতে আমার আর ভালো লাগে না।...”
(৩)
চিঠিটা পড়ে আমার খুব মন খারাপ হয়ে গেল। কার লেখা চিঠি এটা? এই বাসাতেই থাকতেন নাকি? ভদ্রলোকের জন্য আমার খুবই খারাপ লাগছে।
আমি খুব সাধারণ মানুষ, চিন্তা ভাবনার গভীরতা একেবারেই নেই। নিজের জীবনে অ্যাডভেঞ্চার বলতে কি বোঝায় সেটা কখনোই বুঝিনি। আমার কাছে এখন এই বাসা পাল্টানোটাই একটা অ্যাডভেঞ্চার। ছেলে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে-কলেজে যাই, ওদের যখন রেজাল্ট দেয় – এগুলোই আমার জীবনের একমাত্র গল্প। কথা বলে আরাম পাওয়া যায় না বলে বোধহয় আমার বন্ধুবান্ধবও কম।
বিয়ের আগে আমার সহধর্মিণীর সাথে যেদিন প্রথম দেখা হল সেদিন সে চোখমুখ শক্ত করে আমাকে কিছু কথা বলেছিল। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় সেও একজনকে ভালোবাসতো। কোন একটা কারণে দু’জনের সম্পর্কটা শেষ পর্যন্ত টেকেনি। সেই ছেলেটা কখনও হয়তো আর ফিরে আসবে না, এলেও সে হয়তো আর ফিরে যাবে না, কিন্তু তাঁর মন থেকে ছেলেটাকে মুছে ফেলা কঠিন। আমাকে দেখে তার ভালো মানুষ বলে মনে হয়েছে বলে সে বিয়েতে রাজী হয়েছে। এখন আমি চাইলে তাঁকে বিয়ে করতেও পারি, নাও করতে পারি। মজার ব্যাপার হল, আমিও একজনকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছিলাম একসময়। অবশ্য সেটা মনে মনেই থেকে গিয়েছিল। কি যেন নাম ছিল মেয়েটার? মনে পড়ছে না।
আমার স্ত্রীকেকে প্রথম দেখেই সম্ভবত আমি ভালোবেসে ফেলেছিলাম। সেদিন তাঁর সেই অদ্ভুত কথা শুনে দু’রাত আমি ভালো করে ঘুমাতে পারিনি। কিন্তু তৃতীয়দিন সকালে বাসার সব মুরুব্বীদের জোর করে ধরে নিয়ে ওদের বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম। সেদিনই ওকে আঙটি পড়িয়ে রেখে এসেছিলাম। আমার ভালোবাসার গল্প বলতে এতটুকুই! চিঠিটা পড়ে আজকে আবার সেই কথাগুলো মনে পড়ে গেল। বুকের ভেতর কোথাও কি একটু ব্যাথা করে উঠল? কে জানে?
এরমধ্যেই আমার গিন্নি এক কাপ চা নিয়ে বারান্দায় চলে এসেছে। তাঁর দিকে তাকিয়ে আমার বুকের মধ্যে কেমন যেন করে উঠলো। ক্লান্ত মুখে এখনও হাসি জড়িয়ে আছে। আমি চিঠিটা হাতে নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলাম, “তুমি কেমন আছো?”
গিন্নি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে পালটা প্রশ্ন করলো, “হঠাৎ এই কথা?”
আমি চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বললাম, “আমার পাশে একটু বসবে!”
“আহ! রাখ তো! অনেক কাজ পড়ে আছে! রান্না করতে হবে!” বলেই ঘরের ভেতরে রওনা দিল।
আমার জীবনটা এই রকমই। আমার কোন কথাই বলা হয়ে ওঠে না। হয়তো আমার বলার প্রয়োজন নেই। আমি এক হাতে সেই অসম্পূর্ণ চিঠিটা আর এক কাপ ধূমায়িত চা নিয়ে বারান্দায় একা বসে রইলাম। চিঠিটা মনে হয় না পড়লেই ভালো ছিল।
(৪)
চায়ের কাপটা এক পাশে রেখে দোমড়ানো চিঠিটা কুচি কুচি করে ছিঁড়ে বাইরে ফেলে দিলাম। আর তখনই আমার স্ত্রী এক কাপ চা হাতে নিয়ে বারান্দায় এসে বসলো। আমি প্রায় চমকে গিয়েছিলাম।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ও আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “কি যেন বলছিলে?”
আমি অন্যমনস্ক ভঙ্গীতে বললাম, “নাহ, তেমন কিছু না।”
“তোমার কি কোন কারণে মন খারাপ?”
“নাহ!”
ঠিক তখনই হৈহৈ করতে করতে আমার দুই ছেলে মেয়ে আন্দালিব আর আনিকা এসে পড়লো।
“তোমরা একা একা এখানে বসে কি করছো, বাবা?” জোর করে আমার হাতের চায়ের কাপটা কেড়ে নিয়ে মেয়ে প্রশ্ন করলো।
“গাধী, তুই কিছুই বুঝিস না। বাবা-মা গল্প করছিল।” কথা বলতে বলতে আন্দালিব মেঝেতেই বসে পড়লো।
“সত্যি!” আনিকা বাচ্চা মেয়ের মতো খুশী হয়ে ওঠে। “অনেক দিন গল্প শুনি না।”
আমি গম্ভীর গলায় বললাম, “সত্যি গল্প শুনবি?”
ছেলে মেয়ে এক সাথে হ্যাঁ বলে ওঠে। আন্দালিব এবার মায়ের হাত থেকে চায়ের কাপ কেড়ে নিয়ে বারান্দায় হেলান দিয়ে বসে।
“আমি যে একবার সুন্দরবন গিয়েছিলাম সেই গল্প কি তোদের বলেছি?”
“না, বাবা!”
সদ্য ছিঁড়ে ফেলে দেয়া চিঠিটার গল্পটা ধার করে আমি গল্প বলতে থাকি। আকাশে একফালি চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের আলোর খানিকটা এসে পড়েছে আমাদের বারান্দায়। সেই আলোতে গল্প শোনার জন্য আমার সামনে বসে আছে আমার ছেলে, মেয়ে আর তাদের মা। এই তিনজন মানুষের কাছে আমি ভালোবাসার ঋণে জড়িয়ে আছি। নিজেদের ভুল ভ্রান্তি এড়িয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই আসলে একটা কঠিন সাধনা। সেই সাধনার পুরস্কার আছে। আমার মনে হয় ভালবাসতে পারাটা সেই সাধনার পুরস্কার, তবে এই উপহার গ্রহণ করতে জানতে হয়। আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। তারপরও জীবনের এই অসাধারণ বিষয়টা আজকে আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে ধরা দিল।
বারান্দায় সুন্দর বাতাস আসছে। সেই বাতাস কোন এক জায়গা থেকে ভাসিয়ে নিয়ে আসছে হাসনাহেনার মাদকতাময় সুবাস। আমি গল্প বলতে শুরু করি, অসম্পূর্ণ চিঠিটা এবার সম্পূর্ণ হতে থাকে।

"...He breathes into my ear
until my soul takes on His fragrance.
He is the soul of my soul –
How can I escape?
But why would any soul in this world
want to escape from the Beloved?"
---Rum

Thursday, November 26, 2015

শহরের এই ব্যাস্ত জীবনে আমরা অনেকেই হয়ত খেয়াল করি না পূর্ণিমা রাতের কথা। যাই হোক আমি আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি আজ পূর্ণিমা।চাইলে আপনারা আজ রাতের জন্য পরিকল্পনা সাজিয়ে নিতে পারেন কিভাবে উদযাপন করবেন এই রাতটিকে। এখনও হাতে কয়েক ঘন্টা সময় পাবেন।

তুমি এমন ভাবে বলো, ইচ্ছে করে মানুষ হয়ে যাই!!


তুমি এমন ভাবে বলো-
ইচ্ছে করে মানুষ হয়ে যাই।

তোমার চোখ ভেজা দেখে আমি কাঁদি,
নিজে নিজেই হাসি তোমাকে হাসাতে;
কিভাবে যেনো আমার গলা-
গ্রীবা হয়ে ওঠে।

কতোদিন সন্ধ্যার কাঁচুমাচু লাল সূর্য্যটাকে
আটকাতে হবে বলে ছলছল চোখে
আবদার করেছো তুমি;
আলতো করে নেমে এসেছে-
অরণ্যের স্পর্শ।

আমাদের সাদাসিধে গ্রামে অনুপস্থিত-
টগবগে লকলকে আলোর ঝলকানি,
বরং কিছুটা সস্তাই আছে-
তামাকের ঘ্রান।

তোমার অলস অধিকার কীভাবে যেন
ছিঁড়েখুঁড়ে তছনছ করছে আমাকে।
আমি হারাই, হারাতে বাধ্য হই;
আমি আর আমি নই,
অন্য কেউ হতে চাই।

তুমি এমন কিছু করো-
ইচ্ছে করে মানুষ হয়ে যাই!

Wednesday, November 25, 2015

শুভ্রের আধুনিক ভালবাসার সংবিধান    

লেখক- শুভ্র সকাল 




চলন্ত রিক্সায় বসে প্যাডেলের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুভ্র।শুভ্রের পাশে বসা তরী তাকিয়ে আছে শুভ্রের দিকে। তরীর সাথে শুভ্রের সম্পর্ক কি তা জানা যায়নি। তবে তারা প্রেমিক প্রেমিকা নয়। আর যদিও বা প্রেমিক প্রেমিকা হয় তাহলে তারা আধুনিক ভালবাসার সংবিধান এড়িয়ে চলে।শুভ্র তুমি কি রিক্সা চালানো শিখছো?উহু। তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন!ভাল লাগছে তাই।পাশে আমি বসে আছি, আমার চেয়েও বেশি ভাল লাগছে ওই প্যাডেল!  হুম।আমি নামবো। চাচা রিক্সা সাইড করেন। তরী রেগে গেছে। সামান্য একটা রিক্সার প্যাডেলকে এখন তার শত্রু মনে হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক, পছন্দের মানুষ যদি একটি গাড়ির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেয়েদের চোখে তখন ওই গাড়িও শত্রু হয়ে যায়।শুভ্রের হাতে একটি লাল রঙের খাম। ভেতরে চিঠি আছে কি না জানা যায়নি।হয়তো নেই, যদিও বা থাকে তাহলে সেটি কোন প্রেমপত্র হতে পারেনা।শুভ্র ভিতু ছেলে, প্রেমপত্র লিখতে সাহস লাগে।তরী হাত থেকে খামটা কেড়ে নিয়ে নেমে গেল। ভেবেছে শুভ্র হয়তো তাকে উদ্দেশ্য করে কিছু লিখেছে। তরী খাম খুললো। ছোট একটি কাগজে লেখা -

" যান্ত্রিকতার ঢেউয়ে ডুবেগেছে মনুষ্যত্বের রবি। চারদিকে ঘুটঘুটে অসভ্য অন্ধকার। মরিচা ধরেছে ভালবাসাবাদীদের মনে, ঘুনে খেয়ে ফেলছে সভ্যতা।আধুনিক ভালবাসার সংবিধানের বিরুদ্ধে অমরন অনশনে থাকা ভালবাসাবাদীরা মুখে খাবার তুলে নিয়েছে।আমিও তাদেরই দলে। "

তরী কিছুই বুঝলো না। সব তার মাথার ওপর দিয়ে গেল।কাগজটা মুচড়ে ফেলেদিল রাস্তায়।নাগরিক হাওয়ায় গড়াতে লাগলো ভারি ভারি কিছু কথা। আসলে মেয়েরা বোঝে না, বোঝার চেষ্টাও করেনা ।

Tuesday, November 24, 2015

‘হ্যাপি এন্ডিং’



পার্কের ছোট্ট বেঞ্চ টায় সেই কখন থেকে বসে আছি। নীলাদ্রীর আসার কোনো নাম গন্ধই নেই। এই মেয়েটা সবসময় এরকম দেরি করে। আর আমি এভাবে প্রতিদিন ওর জন্য অপেক্ষা করি।সকাল ১১ টা বাজে। ফুল স্পীডে ফ্যান চালিয়ে কাথামুরি দিয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই মনে হলো যেনো ভূমিকম্প হচ্ছে। ধরফর করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম।কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি আর কোনো কিছু থেকে নয়। আমার ফোনের ভাইব্রেশন থেকে। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একগাদা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো আমার দিকে নীলাদ্রী।এই তুমি কোথায়? কি করো? কতক্ষণ ধরে তোমায় কল দিচ্ছি। কল রিসিভ করছিলেনা কেনো?স্যরি। আসলে ঘুমাচ্ছিলাম তো। তাই বুঝতে পারিনি।
-তুমি এখনো ঘুমোচ্ছিলে। এখন কয়টা বাজে আদৌ কোনো ধারণা আছে তোমার? ২০ মিনিটের মধ্যে পার্কে চলে আসো। তোমার সাথে জরুরী কিছু কথা আছে।বলেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিলো। সাত পাঁচ না ভেবে কোনোরকম ফ্রেস হয়ে তড়িঘরি করে সুপারম্যানের মতো ২০ মিনিট এর মধ্যেই পার্কে এসে পৌছলাম। আর এরপর হতেই এই ছোট্ট বেঞ্চটায় বসে তার পথ চেয়ে আছি।আরেহ। ওইতো দূর হতে নীলাদ্রীকে হেটে আসতে দেখা যাচ্ছে। আজ ও একটা নীল শাড়ি পড়েছে। মনে হচ্ছে আকাশ হতে ভুল করে কোনো নীল পরী টুপ করে নেমে পড়েছে এ ধরনীতে। ওর মাতাল করা চোখের ভাষায় অভিভূত হয়ে গেলাম আমি।এই যে মিঃ! কি দেখো এমন করে? হুম?তোমাকে!কি! আমায় আবার কি দেখো? আমায় তো প্রতিদিনই দেখো তুমি।না মানে যতবারই তোমায় দেখি। ততোবারই নতুন করে তোমার প্রেমে পড়ে যাই।হয়েছে হয়েছে। তোমার ফিল্মি ডায়ালগ রাখো এবার। একটু সিরিয়াস হও। যাইহোক। যা বলার জন্য ডেকেছিলাম তোমায়।হ্যাঁ। বলো।তুমি আমায় ভালোবাসো?হুম। অনেক ভালোবাসি। কিন্তু হঠাৎ এভাবে ডেকে আনলে এটা জানার জন্য?না। আচ্ছা ভালোই যদি বাসো। তাহলে বিয়ে করছোনা কেনো আমায়?আমি তো তোমায় আগেও বলেছি আর এখনও বলছি। আমি একবার চাকরি পেয়ে যাই। এরপরেই তোমায় আমার ঘরে তুলে নিবো।দেখো।আমি এপর্যন্ত অনেক বিয়ের সম্বন্ধই বিভিন্ন অজুহাতে ভেঙ্গে দিয়েছি। কিন্তু এভাবে আর কতোদিন? বাসা থেকেও প্রচুর চাপ দিচ্ছে এই বিয়ে নিয়ে। আজকে আমায় দেখতে আসছে পাত্রপক্ষ। ছেলে ভালো জব করে। সবারই পছন্দ হয়েছে ছেলেটিকে। হয়তো এটাই ফাইনাল।এতো খুশীর খবর। অনেকদিন কোনো বিয়ের দাওয়াতে যাওয়া হয়না। আমায় বিয়ের কার্ড দিতে ভুলোনা কিন্তু।নীলাদ্রী আমার এই কথা শুনে আর বসলো না। দাড়িয়ে বললো,তোমার জন্য আর অপেক্ষা করা সম্ভব হলোনা অভ্র। এসব জানানোর জন্যই তোমাকে ডেকেছিলাম।বলেই টনাবিলা চোখে টলটল পানি নিয়ে ফেরার রাস্তা ধরলো। আমি পেছন থেকে ডাকলাম..নীলাদ্রী শোনো।নীলাদ্রী থমকে দাড়ালো। হয়তো কিছু শোনার আশায়। আমি বললাম...
-তোমার বিয়ে হবে ভালো কথা। আমাকে জানিয়েছো সেজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ তোমায়। কিন্তু তোমার কাছে কি ১৫ টাকা হবে?নীলাদ্রী বিরক্তি মুখে চোখ কুচকে জিজ্ঞেস করলো...কেন?আমার কাছে যাওয়ার ভাড়া নেই। যা ছিল তা আসার সময় কোনরকম ভাড়া দিয়ে এখানে চলে এসেছি।নীলাদ্রীর সুন্দর মুখ টা রাগে লাল হয়ে গেল মুহূর্তেই। কোন কথা না বলে ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে ধরলো...ধন্যবাদ। আর হ্যাঁ। রেগে গেলে কিন্তু তোমাকে সাক্ষাত অপ্সরীর মতো লাগে।
নীলাদ্রী এবার আর চোখের পানি আটকাতে পারলো না। চোখ মুছতে মুছতেই দৌড়ে চলে গেল।আর আমি কানে হেডফোন গুজে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। নীলাদ্রীকে নিয়ে আপাততো কোনো কিছু ভাবতে চাইনা। যতই ওকে নিয়ে ভাববো। ততই ওর মায়ায় পড়ে যাবো। তাই নিজেই নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। যা হওয়ার তা তো হবেই। এসব নিয়ে ভাবা মানেই সময়ের অপচয়।আজকে নীলাদ্রীর বিয়ে হয়ে গেলো পারিবারিক সম্মতিতে। বাসর রাতে নীলাদ্রী মুখে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। বর ঘরে ঢুকে দরজা লাগাতেই নীলাদ্রী বলে উঠলো।দেখুন আপনার সাথে আমার বিয়েটা কিন্তু জাস্ট লোক দেখানো। সো, প্লিজ আমার কাছে স্বামীর অধিকার দেখাতে আসবেন না। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। আমার বাবা মা এক প্রকার জোর করেই আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আপনার সাথে বিয়ে দিয়েছে।একনাগারে এতোগুলো কথা বলে থামলো নীলাদ্রী। প্রতুত্তরে নীলাদ্রী শুনতে পেলো...তোমার ঐ দীঘল, কোমল কেশরাশি আমার হৃদয় হরণ করিয়াছে। বারে বারে ছুঁয়ে দেখিবার প্রবল ইচ্ছে মনের কোণে উঁকি মারিতেছে। আমি কি একটিবার ছুঁয়ে দেখিতে পারি?নীলাদ্রী বিস্ফারিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো...অভ্র! ত্ত ত্ত তুমি?কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। কি অপূর্ব লাগছে ওকে। আসল ব্যাপার নীলাদ্রী এখনো কিচ্ছু জানে না। আমি বলা শুরু করলাম।মূলত আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। কিছুদিন আগে একটা জব এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পাই। ইন্টারভিউ দেওয়ার পরই জবটা পেয়ে যাই। এরপর সবকিছু অনেকটা আকস্মিক ভাবেই হয়ে যায়।বাড়িতে বাবা মাকে তোমার কথা জানাই। তোমার পরিবারের সাথে কথা হয়। আমার পরিবারের তোমাকে পছন্দ হয়। আর তোমার পরিবার ও আমাকে পছন্দ করে। তোমার বাবা মা থেকে জানতে পারি তুমি আমার ছবি না দেখে ওভাবেই ফেলে রেখে দিয়েছো। ভেবেছিলাম দেখা করার দিনই তোমায় সারপ্রাইজ দিবো। কিন্তু এরপর ভাবলাম এবার শুধু সারপ্রাইজই নয়। বিশাল বড় সারপ্রাইজ দিবো। তাই সেদিন তোমায় পার্কে কিছু বুঝতে দেইনি।নীলাদ্রী এটুকু শুনেই রেগে লাল হয়ে বলে উঠল...তোমাকে আমি খুন করবো।এইরে। পেত্নীটা আজ ক্ষেপেছে।কিইইইই! আমি পেত্নী? আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।ভালোবাসার খুনসুটিতে এগিয়ে চলছে স্বপ্ন। লাইটটা অফ হয়ে গেলো। তারপর...
ইট'স কন্টিনিউয়িং!

লেখক- শুভ্র সকাল



অর্পিতা নীল সাদা দেয়ালে গল্প লিখে যাচ্ছিল..বিরতিহীন আঙ্গুলগুলো ছন্দ মিলিয়ে কিবোর্ড এর উপর ক্লান্তিহীন নাচ নেচেই যাচ্ছে...অর্পিতা জানে, তার গল্পের অপেক্ষা মানুষ করে, কেউ আনন্দ নেয়, কেউ হতাশা কুড়ায় আর কেউবা সাহস খুঁজে পায়..যেমনটা আফজাল হোসেনের মৃত্যু নিয়ে লিখা গল্পটায় মানুষ হতাশা খুঁজে পেয়েছিল..ঋণের বোঝা বয়ে বেড়ানো আফজাল হোসেন যখন আত্মহত্যা করে তখন মানুষের ভিতরের লুকানো মায়াটাও বের হয়ে এসেছিল! অর্পিতা "ভিতরের মানুষটাকে বের করে আনতে পারার অসামান্য ক্ষমতা রাখে" - এই প্রশংসা ও পেয়েছিল।কিংবা চাকরী না পেয়ে ড্রাগ এডিক্টেড হয়ে যাওয়া সৌরভের গল্পটা..সেই গল্পে কত যুবক শপথ করেছিল, হতাশ হলেও, পথ হারাবে না..মা হারা নিঝুম যখন একা একা স্কুলে যেতে গিয়ে বখাটের জন্য বাবার মাথা ব্যাথায় পরিণত হয়েছিল তখনো অর্পিতা দেখেছে মানুষ সেই বখাটেগুলাকে কি তুলোধোনা করেছে...সামনে পেলে তারা বোধহয় গণধোলায়ে মেরেই ফেলতো..আর সমাজ হাজার নিঝুম আর তার বাবাকে মুক্তি দিত ! নিঝুমদের স্কুল ছাড়তে হতো না !অর্পিতা এক নাগাড়ে লিখে যায়..আজকের গল্পের নায়িকা শিক্ষিত মেয়েটি যে সমাজ আর সংসারের বোঝা মাথায় নিয়ে মাঝরাতে পুরুষ নামক জাতিটার কাছে নিজের খোলসটাকে সমার্পন করবে, যার বোনটা বখাটেদের অত্যাচারে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছিল,তবুও কেউ এগিয়ে আসে নি..যার ভাইটা শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও একটা চাকরী পাই নি..যার বাবা ঋণের বোঝা সঙ্গী করে আত্মহত্যাকে আপন করেছিল...শেষ গল্পের নায়িকা অর্পিতা ক্রমাগত কিবোর্ডের উপর হাত চালিয়ে যায়...নীল সাদা দুনিয়ায় একদল প্রতিবাদী- আশাবাদী মানুষ তার লেখার অপেক্ষা করছে, যাদের দেখা অর্পিতা কোনদিন পাবে না!!!

অসমাপ্ত স্বপ্ন




বুলেটটা ছুটে আসছে অসম্ভব দ্রুত গতিতে, ঠিক যেমনি করে বুলেটটির ছোটার কথা ছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনক মনে হলেও আমি বুলেটটির এগিয়ে আসার প্রতিটি ধাপ স্পষ্ট দেখতে পারছি। ইচ্ছে করলেই ছুটে গিয়ে আমি এখন বুললেটির গতি পরিবর্তন করে দিতে পারি, কিংবা নিজে সরে গিয়ে বুলেটের আঘাত করার রেঞ্জের বাইরে চলে আসতে পারি। অবিশ্বাস্য হলেও আমার এখন এর কোনটিই করতে ইচ্ছে করছে না। ভেতর থেকে আমি প্রস্তুত ছিলাম, এটা যে হবেই তা আমার জানা ছিল। কিংবা বলা যেতেই পারে এটা আমার স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে পরখ করার মত একটা বিষয়। কিংবা তোমাদের চোখে যা আত্মহত্যা, আমি সেটাই করছি এই মুহূর্তে....হ্যাঁ, আমি জানতাম আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম একটা দীর্ঘ সময়। সাথে চমৎকার একটা স্বপ্নেও বিভোর ছিলাম লম্বা এই সময়টা ধরে। স্বপ্ন যা বাস্তবতাকে ছুঁয়ে তার সমমানের আরেকটা বাস্তবতায় রূপ লাভ করেছিল আমার নিউরন গুলির সহায়তায়। এই স্বপ্নটাকে যদি কেউ সিম্যুলেশন করে ধরে রাখতে পারত তাহলে নিশ্চিত এরচেয়ে নিখুঁত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রোগ্রাম দুনিয়ার দ্বিতীয়টি হতে পারত না। কিন্তু আমার এই সময়টাতে প্রযুক্তি এখনো তত দূর পর্যন্ত অগ্রসর হয়নি, আর হয়নি বলেই সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সেই স্বপ্নটাতেও কিছু একটা ছিল, এমন কিছু যা আমার মস্তিষ্ককে ঠিকই বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে একটা চমৎকার স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আমি সেই স্বপ্ন থেকে বের হতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত আমাকে সেই পথটাই বেঁছে নিতে হল যেটা সাধারণত কেউ বেঁছে নেয় না। হ্যাঁ, স্বপ্নে আমাকে আত্মহত্যাই করতে হয়েছিল। আর এভাবেই ঐ স্বপ্নটার ইতি ঘটল। ধারেকাছে কোথাও হুইসিল বেজে যাচ্ছে তারস্বরে। হুইসিলের শব্দটা যেন নিজেই নড়াচড়া করতে পারছে। একটু আগে ঐ হুইসিলের শব্দের উৎস যেমন অনেক দূরে মনে হয়েছিল এখন সেটা নিতান্তই নিকটে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আর একটু পরেই আমি সেই হুইসিলটাকে সহ হুইসিল বাদককে দেখতে পারবো। হল ও তাই, চোখ ধাঁধানো আলো জ্বেলে একটা ট্রেন এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আর আমার অবস্থান ঠিক সেই ট্রেনটার চলার পথের মধ্যখানে। পায়ে খুব শক্ত করে সেঁকল লাগানো রয়েছে আমার। ইচ্ছে করলেও আমি এখন এই রেল পথ ছেড়ে বাইরে দাড়াতে পারব না। চরম ভয়ংকর একটা মুহূর্ত, বলা চলে আমার এই জীবনের শেষ মুহূর্ত এটা। কিন্তু আশ্চর্যজনক শোনালেও, আমি ভয় পাচ্ছি না। কোনরূপ অস্থিরতা আমাকে ছুঁতে পারছে না। নিশ্চল মানুষের মতই আমি নির্বিকারে দাড়িয়ে আছি রেল লাইনটার মধ্যে। ধীরে ধীরে ট্রেন এগিয়ে আসছে আমার দিকে। এত ধীরে যে আমি তার চাকার প্রতিটা সাইকেল পূর্ণ করার সময় পর্যন্ত গুনে দিতে পারব। সেই হিসেবে অফুরন্ত সময় আমার হাতে। কিন্তু এটাও নিশ্চিত, প্রতিটি মাইক্রো সেকেন্ড পার হচ্ছে আর নিশ্চিত মৃত্যু আমার দিকে ধেয়ে এগিয়ে আসছে....হ্যাঁ, আমি এবারও আত্মহত্যা করেছি। কারণ আমার জানা ছিল মৃত্যু রূপে ঐ ট্রেন আমাকে কখনোই ছুঁতে পারবে না, বরং আমাকে সহায়তা করবে। আর হয়েছেও সেটাই। আমি এবারে সত্যিকার অর্থেই জেগে উঠেছি ঐ ঘুম থেকে। অদ্ভুত, তাই না? আমি একটি ঘুমের মধ্যে আরেকটি ঘুমের স্বপ্ন দেখছিলাম, আর সেই স্বপ্নের ভেতর স্বপ্ন থেকে জেগে উঠবার জন্যে এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম যে নিজের পরোয়া পর্যন্ত করিনি। একটা ধারণার উপর ভিত্তি করে নিজেকে বসিয়ে দিয়েছি গান পয়েন্টের সামনে। তারপর যখন সেই স্বপ্নটা থেকে বের হয়ে আসলাম, বুঝলাম এটাও আমার আরেকটা স্বপ্ন। আর ততক্ষণে সেই স্বপ্ন থেকে আমাকে আবার জাগিয়ে তুলবার আরও অনেক ধাপ পার করে ফেলেছিল আমারই অবচেতন মন। আর এবারে সোজা ধরে নিয়ে দাড় করিয়ে দিয়েছিল একটা ট্রেন লাইনের উপর। জেগে উঠলাম আবার। সেই পরিচিত জায়গা, সেই পুরনো গন্ধ বাতাস জুড়ে। আধো আলো আধো অন্ধকার পুরো ঘরটা জুড়ে। আসবাব সবই অস্পষ্ট, কিন্তু স্মৃতিকে ধার করে আমি সবই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। কোথাও জেনারেটর কিংবা মেশিনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। খুব সম্ভবত লোড শেডিং চলছে। আলসেমির কারণে উঠে বসতে ইচ্ছে করছে না। মাথাটা ঘুরিয়ে দেয়ালে ঝোলানো ডিজিটাল ঘড়িটার দিকে তাকালাম। রাত এমন বেশি কিছু হয়নি, তবুও মেশিনের ঐ গুঞ্জন ছাড়া মোটামুটি চারিপাশটা নিশ্চুপ বলা চলে। অসময়ে ঘুমিয়ে পড়লে অবশ্য এমন অসময়েই জেগে উঠতে হয়। পাশ ফিরে ঘুরতে গিয়েই ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। কিন্তু যতক্ষণে বুঝতে পারলাম ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। খুব মোটা কয়েকটা বেল্ট দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে একটা টেবিলের উপর আটকে রাখা হয়েছে আমাকে। খুব সম্ভবত আমার শরীরে এমন কিছুর প্রবেশ করানো হয়েছে, যার কারণে আমি কোন কিছুই অনুভব করতে পারছি না। অসাড় হয়ে পড়ে আছি টেবিলটার উপর। আর এটা বুঝতে পারার মুহূর্তেই চট করে মনে পড়ল যে মেশিনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল সেটা মূলত কোন জেনারেটরের গুঞ্জন নয়। খুব ধীরে ধীরে পেন্ডুলামের ন্যায় দুলতে থাকা ধারালো এক যন্ত্রবিশেষ আমার দিকে নেমে আসছে। আর একে ধীরে ধীরে নামিয়ে আনার কাজটিই করছে একটা ছোট্ট মোটর। আবারও ঘড়ির দিকে তাকালাম, ঘড়ির সময়ের যদি কোন হেরফের না হয়ে থাকে তবে নিশ্চিত করে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমার মৃত্যু ঘটবে।কিংবা কে জানে! হয়ত এটাও একটি আত্মহত্যার প্রচেষ্টা, যা আমাকে জাগিয়ে তুলবে অদ্ভুত এই স্বপ্ন থেকে.....!!!

পৃথিবীর রং মুহূর্তেই বদলায়



শরতের শেষ বিকেলে আলো আঁধারের মাঝে অব্যস্ত অলস ভাবে হাঁটতে ভীষণ ভালো লাগছে , ব্যস্ততা ছিল তারপরও তড়িঘড়ি করতে ইচ্ছে হোল না , প্রকৃতির প্রতিটি সূক্ষ্ম মুহূর্তকে মর্মে মর্মে অনুভবে আলাদা আনন্দ আছে । এই আনন্দ ভোগের জন্য প্রায়ই অলস ভাবে হেঁটে বেড়াই আমি । রাস্তায় পড়ে থাকা শুঁকনো পাতা গুলোর ক্রাশ ক্রাশ শব্দে অন্য রকম একটি ছন্দ যুক্ত হয়েছে প্রকৃতিতে । থেকে থেকে হিমশীতল উত্তরী বাতাস বইছে শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে । শীতের দেশে চারটি ঋতু - গ্রীষ্ম , শরত , শীত আর বসন্ত , মাঝে হেমন্ত আর বর্ষা নেই । শরত আমার ভীষণ প্রিয় - চারপাশে রং এর ছড়াছড়ি , হলুদ লাল সবুজ , প্রকৃতি এ সময়ে এক অসামান্য রূপ ধারণ করে , সবুজ ঘাসের উপর হলদে পাতায় ছেয়ে স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় । প্রকৃতির এই শোভা দেখতে দেখতে ভুলেই যাই নিজেকে , সমস্ত কাজ আর জাগতিক সম্পর্ক গুলোও আবছা হয়ে আসে ।

হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো - ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে বিরক্তির সুরে শ্যামল বলে উঠলো -
- কি ব্যাপার , তুমি কোথায় কেয়া ? কতক্ষণ থেকে অপেক্ষা করছি ।
- এইতো প্রায় চলে এসেছি, ট্রাফিকে আটকে ছিলাম অনেক্ষন , আসছি , চিন্তা করো না ।

আজকাল বেশ দক্ষ অভিনেত্রীও হয়ে উঠেছি ,মনের অজান্তেই পরিবেশের সাথে খাপ রেখে গল্প সাজিয়ে তাতে অভিনয়ও করে ফেলি , অতি সহজ ভাষায় বলতে গেলে - তাৎক্ষনিক মিথ্যে কথায় বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছি । এই মাত্র শ্যামলের সাথে যেটা বললাম , আমিতো মোটেই ট্রাফিক জ্যামে ছিলাম না । আসলে সবকিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার জন্য কতো কি না করতে হয় । বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চরিত্রে দক্ষ ভাবে অভিনয় করতে পারলেই জীবন প্রবাহ বোয়ে চলে সার্থক ভাবে । যে'ই এখানে দক্ষ অভিনয় করতে ব্যর্থ ,তারই প্রবাহে গতিবিঘ্ন ঘটে ।

হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম ইউনিভার্সিটি , তারপর সোজা চলে গেলাম বেজমেন্ট লাইব্রেরিতে । ওখানেই আমাদের স্টাডি রুম বুক করা ছিল । টার্ম টাইমে ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি চব্বিশ ঘণ্টাই খোলা থাকে ।

শ্যামল ভীষণ রেগে আছে , আমি একঘণ্টা লেট । আমরা একটা এম্পায়রিকাল রিসার্চ করছি সাউথ এশিয়ান কমিউনিটি তে ডিভোর্স এর হাড় বৃদ্ধির কারণ ও এর সোশাল ইমপ্যাক্টের উপড় । শ্যামল কলকাতার ছেলে , ভীষণ পড়ুয়া এবং ভীষণ পাঞ্চুয়াল । এই রিসার্চটা নিয়ে ও ভীষণ সিরিয়াস , আমিই মাঝে মাঝে অমনোযোগী হয়ে পরি । আমার মনটা বিভিন্ন খানে ছুটে বেড়ায় , মনটাকে একটি জায়গায় বন্দি করাটা ভীষণ দুঃসাধ্য হয়ে পরে কখনো সখনো । শ্যামলকে খুশি করার জন্য বললাম ,

- এই জানো পাঁচ জনকে পেয়ে গেছি , ইন্টারভিউ দিতে রাজি হয়েছে । তুমি কাউকে পেয়েছ ?
- না , আমার তো আসলে ওরকম পরিচিত কেউ নেই এখানে । তোমার উপর ডিপেন করেই তো আমি এই প্রজেক্টে এসেছি ।
- ঠিক আছে চিন্তা করো না শ্যাম , সব ম্যনেজ হয়ে যাবে ।

শ্যামলের পড়া ছাড়া আর কোন কিছুতেই আগ্রহ নেই , এমন কি আমি যে এত সুন্দরি একটি মেয়ে বসে আছি ওর সামনে , ওর তাতে কোনই বিকার নেই । কখনো ভালো করে চোখ মেলেও দেখেনি আমাকে । ছেলেরা সাধারণত সুন্দরি মেয়ে দেখলে বোকার মতো আচরণ করতে শুরু করে - আর এটাই তো স্বাভাবিক । কিন্তু এই ছেলেটি একদমই অন্যরকম । এইতো সেদিন তূর্যের অফিসের পার্টিতে নতুন জয়েন করা আইরিশ একটি মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল তূর্য , আর ঐ সময়টাতে তূর্য মানে আমার স্বামী ভদ্রলোকটি একেবারেই বোকার মতো আচরণ করছিলো । আমি মনে মনে ভীষণ হাসছিলাম ওর কাণ্ড কীর্তি দেখে । আর শ্যামল একেবারেই অন্য রকম , আসলে , ও একটু অন্যরকম বোলেই একসাথে কাজটা করতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না ।

বেশ অনেক্ষন হয়ে গেলো লাইব্রেরিতে , ঘড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখি রাত নটা বাজে । ফোন খুলতেই তূর্যের টেক্সট ম্যাসেজটা চোখে পড়লো - ও লিখেছে আজ রাতে ওর বাড়ি ফিরতে দেরি হবে , কাজ শেষে ওরা কোলিকরা সবাই পাবে যাবে আর আজ যেহেতু ফ্রাইডে নাইট কাল আর অফিসের ঝামেলা নেই । আমারও মনে হোল বাসায় না ফিরে কিছুক্ষণ বাইরেই কাঁটিয়ে যাই , শ্যামলকে বললাম,

- শ্যাম , চলো বাইরে কোথাও ঘুরে আসি , মাথাটা কেমন জানি ইনফরমেশনে প্যাক্ট হয়ে আছে , একটু রিলেক্স এর প্রয়োজন ।
- ঠিক আছে চলো যাওয়া যাক ।

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে শ্যামল বলল ,
- কেয়া , আমার ডরমিটরি তো একদমই কাছে , তুমি চাইলে আমরা ওখানেও কিছুটা সময় কাঁটাতে পারি । আসলে পাব জায়গাটা এতো কেওটিক যে ওখানে বেশিক্ষণ থাকলে আমার মাথা ধরে যায় ।

- হুম ঠিকই বলেছ , চলো নাহয় তোমার ডরমিটরিতেই যাই ।

ছেলেটা ভীষণ অমায়িক, মাঝে মাঝে আমি বুঝতেই পারি না আমি একটি ছেলের সাথে কথা বলছি নাকি মেয়ের সাথে । হাঁটতে হাঁটতেও ও আমাদের প্রজেক্ট নিয়েই কথা বলছে । আমার পার্সোনাল ব্যাপারেও ওর কোন আগ্রহ নেই আর ওর নিজের ব্যপারেও কখনো কিছু বলেনি । ইউনিভার্সিটি থেকে দশ মিনিটের হাঁটার পথ ওর ডরমিটরিটি । ওখানে পৌঁছে , আমি তো অবাক ! - সুন্দর করে গোছানো , একেবারে টিপটপ পরিপাটী । ছেলেদের ঘরও এতো সুন্দর গোছানো থাকে ! ভাবাই যায় না । শ্যামল আমাকে জিজ্ঞেস করলো ,

- অনেক পুড়নো একটি ব্র্যান্ডি আছে , চলবে তোমার ? নাকি গতানুগতিক ভালো মেয়েদের মতো হোয়াইট ওয়াইনই চাই তোমার ?

আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম , এতো উদাসীন একটি মানুষ কি করে খেয়াল করলো যে আমি হোয়াইট ওয়াইন ছাড়া কিছু খাই না । আমি প্রতিউত্তরে বললাম ,

- ভালো মেয়েরা যা খায় সেটাই দাও ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্যামল ওয়াইন গ্লাসে করে দু গ্লাস ওয়াইন নিয়ে আসলো । এবং স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে শুরু করলো প্রজেক্ট নিয়ে । আমি ওকে থামিয়ে বললাম তুমি তোমার বাড়ির কথা বল , প্রজেক্ট নিয়ে পরে কথা বলা যাবে । ও থেমে গেলো আর আমার দিকে তাকিয়ে ছিল । ইতিমধ্যেই , আমি কয়েক চুমুক ওয়াইন নিয়ে ফেলেছি । হঠাৎ করেই আমি ওর চোখের ভিতর অজানা অন্ধকারচ্ছন্ন রাস্তা দেখতে পেলাম , মনে হোল দমকা ঝোড় হাওয়ায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো । তারপর আর কিছুই মনে নেই ।

চোখ মেলে যখন তাকালাম , তখন নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় দেখতে পেলাম , পাশে তূর্য আমার হাত ধরে বসে আছে । ওকে জিজ্ঞেস করলাম ,

- আমার কি হয়েছে ? আমার সারা শরীরে এতো ব্যাথা কেন ?
- তোমার কিছু হয়নি কেয়া , তুমি ভালো আছো । তুমি বেঁচে আছো ।

তূর্যর চোখে কখনো পানি দেখিনি আমি , ওর গাল বেয়ে পানি ঝরছে , ঠোঁট কাঁপছে । তখনই আমি বুঝতে পারছিলাম কাল রাতে কি কি হয়েছিলো আমার সাথে । আমার চোখে পানি দেখে , ও নিজেকে সামলে নিয়ে আমাকে ওর বুকে টেনে নিলো , আপ্রাণ চেষ্টা করছে আমাকে শারীরিক আর মানসিক ভাবে সারিয়ে তোলার । ও যে আমাকে এতোখানি ভালোবাসে সেটা আমি আগে এতোটা গভীরভাবে উপলব্ধি করিনি কখনো। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হচ্ছিলো ,

- তূর্য আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি , অনেক অনেক ।
কিন্তু গলা দিয়ে একটি শব্দ বের হোল না । কখনো এই কথাগুলো মুখে বলিনি আমি , আজও বলতে পারিনি । চোখে চোখে বলেছি অনেক বার কিন্তু এই অতি আবেগি অনুভূতিকে প্রকাশ করার সুযোগ্য কোন শব্দ পাইনি কখনো । একমাত্র এই জায়গা গুলোতে আমি দক্ষ অভিনেত্রীর কাজটি সম্পন্ন করতে পারিনি কখনোই ।

আমাদের পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনে আমরা বেশিভাগ সময়ই ব্যস্ততায় কাটিয়েছি , যার যার ক্যারিয়ার আর স্টাডিজ নিয়ে । মা হওয়ার সময়টুকুও বের করতে পারিনি এই পাঁচ বছরে । আজ , এতো এতো পড়াশুনা পিএইচডি সব কিছু অর্থহীন মনে হচ্ছে , মনে হচ্ছে অযথাই এতো কিছু করা । জীবনটা কেমন যেন সাদামাটা হয়ে গেছে , প্রকৃতির রং গুলো এখন আর ওভাবে উপলব্ধি করতে পারি না । বেশিভাগ সময়ই ঘড় অন্ধকার করে বসে থাকি বিমর্ষ হয়ে ...
 

Sample text

Sample Text

Sample Text

 
Blogger Templates