Ads 468x60px

Monday, November 16, 2015

অবন্তি ও আনন্দের ভালবাসার গল্প


কাল কিন্তু তুমি নীল রঙের পাঞ্জাবি পড়বে ।আর আমি পড়বো নীল রঙের শাড়ি ।সাথে নীল টিপ ও রেশমি চুড়ি । ঘুম জড়ানো কন্ঠে জানতে চায় আনন্দ -ক্যান কাল কি দিবস?যার জন্য এত সাজুগুজু !মানে!তোমার মনে নাই কাল কত তারিখ?কি দিবস?ওই বজ্জাত পোলা,উঠ্ ঘুম থেকে উঠ্ আগে ।তারপর তোরে বলতেছি,কাল কি দিবস! কট করেই লাইনটা কেটে মোবাইলটা খাটের উপর আছাড় মারে অবন্তি । রাগে দুঃখে দুচোখ ঝাপসা হয়ে আসছে তার ।এমন একখান মানুষের সাথে প্রেম করেছে,যে কিনা কিছুই মনে রাখে না । তাকে সব কিছু অবন্তির মনে করিয়ে দিতে হয় ।এতটা বেখেয়ালী ছেলে! সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বলতে পারবে না ।ঘুম ভাঙলো মোবাইলের কলার টিউনে। ঘুমের ঘোরেই রিং টিউনের আওয়াজ শুনে বুঝতে পেরেছে অবন্তি,কে কল করেছে ?আনন্দের কলার টিউনটা আলাদা করে সেট করে রেখেছে সে । -হ্যালো.... -বউ এখনো ঘুমাচ্ছো !আমি নীল পাঞ্জাবি পড়ে বসে আছি সাথে লুঙ্গি! লুঙ্গির কথা শুনেই কিনা কে জানে,অবন্তির ঘুম ঘুম ভাবটা একেবারে উবে গেছে । ধরমড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে ।ঘড়ি দেখলো ১০টা বাজে ।আরি বাপস!অনেকক্ষন ঘুমিয়ে ফেলেছে । -হ্যালো....বউ কি ব্যাপার কথা বলছো না কেনো ?আমি তো রেডি ।বলো কোথায় আসতে হবে ? -তুমি লুঙ্গি পরে আসবা TSC,পাঞ্জাবির সাথে !? ঘোর কাটিয়ে জবাব দিল অবন্তি । -আরে বউ লুঙ্গি হচ্ছে আনকমন পোশাক ।ভেবে দেখো,তুমি শাড়ি পরবে আর তোমার পাশে আমি হাঁটবো লুঙ্গি+পাঞ্জাবি পড়ে ।লুঙ্গির এককোণা হাত দিয়ে উঠিয়ে হাঁটবো তার সাথে মুখে থাকবে মিষ্টি জর্দ্দা মেশানো মশলা যুক্ত পান ।কিছুক্ষন পর পর আমি পিচিক করে পানের পিক ফেলবো আর একগাল হাসবো তোমার পানে চেয়ে ।চিন্তা করতে পারতেছো বউ ব্যাপারটা কেমন..... -চুপ,একদম চুপ...একটা লাথি দিব.... -বউ ,তোমাকে_ _ _ দিব... মুচকি হাসে অবন্তি ।ভেবে পায় না এই অগোছালো ছেলেটাকে ভবিষ্যতে কিভাবে সামাল দিবে সে ।সব সময়ই এলোমেলো !অপরাধ করবে ননস্টপ !আর যদি অবন্তি সেই অপরাধ ধরিয়ে দেয় তবে অনুশোচনার জায়গায় উল্টো রেগে যাবে !তবে সে যখন রেগে যায় তখন পাগলটা এমন সব কথা বলবে যে ,পাগলটার সাথে আর রাগ করে থাকতে পারে না অবন্তি ।ফোনটা রেখে ফ্রেশ হয়ে এলো অবন্তি ।ওয়ারড্রব থেকে যত্নে তুলে রাখা নীল রঙের শাড়িটা বের করলো ।পাগলটার দেয়া শাড়িটি এই দিনে পরবে বলে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে ।গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে তৈরি হচ্ছে অবন্তি.... বাসা থেকে বের হতেই না হতেই আকাশ কালো করে নামলো ঝুম বৃষ্টি ।মুখটা কালো করে আকাশের পানে চাইলো অবন্তি ।বৃষ্টি আসারও আর সময় পেল না ।সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে সে ।যেই বৃষ্টি আল্লাহ্ মালুম কখন থামবে ।ঘড়ি দেখলো সাড়ে এগারোটা বাজে ।আনন্দকে ফোন দিল.... -হ্যাঁ বউ কই তুমি ? -এখনো বাসার সামনে ।তুমি কই? -আমিও বাসার সামনে ।যেই বৃষ্টি বের হবো কিভাবে? -জানিনা...হতাশ কন্ঠে অবন্তি জবাব দেয় । -আমি বলি কি আজ না বের.... -চুপ থাকো ।আমি বলছি আজকে দেখা হবে সো হবে.... অবশেষে দেড় ঘন্টা প্রতিক্ষার পর পুরো প্রকৃতিকে কাক ভেজা করে তবেই থামলো বৃষ্টি ।আনন্দকে রওয়ানা হওয়ার এস এম এস করে নিজেও একটা সিএনজি ঠিক করলো ।ঢাকা শহরের রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলাচল করবে এটা তো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখার নামান্তর!মানিক দি থেকে বেশ ভালোই দূরত্ব টি এস সি'র ।ওর্য়াকশপের কাছাকাছি বেশ লম্ব একটা জ্যামে খুব ধৈর্য সহকারে বসে আছে অবন্তি ।বিরক্ত লাগছে খুব,কিন্তু কিছু করার নেই ।তার বিরক্ত মুখখানা দেখে জ্যাম ছুটে পালিয়ে যাবে না ।তারচেয়ে মনটাকে চাঙা রাখার জন্য কল্পনার জগতে হারিয়ে যাওয়াই ভাল । কৃষ্ণচূড়া লাল হয়েছে ফুলে ফুলে তুমি আসবে বলে.... সত্যিই আজ কৃষ্ণচূড়ার পথটা আগুন রাঙা লাল !সেপথে হাঁটছিল অবন্তি আর আনন্দ । দূর থেকে হঠাত্‍ দেখলে মনে হবে,আগুনের উপর 
 দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দুজন । যেনো ভালবাসার কোন কঠিন পরীক্ষা দিচ্ছে!অবন্তি খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আনন্দের বাহুখানা । যেনো ভালবাসার এই কঠিন পরীক্ষাটা দুজনে একসাথে পাশ করে যেতে পারে । যেনো পাশাপাশি এভাবেই চলতে পারে প্রতিটি পথ হাতে হাত রেখে ,হৃদয়ে ভালবাসা মেখে । হঠাত্‍ অবন্তি খেয়াল করলো ওদের দুজনের হাত ধরে মধ্যিখানে আরেকজন হাঁটছে ।একটা পুচ্চি মেয়ে বাবু !!! আনন্দের খুব ইচ্ছা,তার প্রথম সন্তানটা যেনো মেয়ে হয় । পুচ্চিটা কিছুক্ষন পর পর,ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে ফোঁকলা দাঁতে হাসছে আর অজানা,অচেনা,অনর্থক সব শব্দ দিয়ে প্রকাশ করে যাচ্ছে তার আনন্দটুকু । অবন্তি ও খিলখিল করে হাসছে,তার মেয়ের এহেন কর্ম দেখে । মেয়েটা একেবারে আনন্দের মত হয়েছে ।খাঁড়া নাক,লাল টুকটুকে ঠোঁট,দুধে আলতা গাঁয়ের রং.... তবে চোখ দুটো আর হাসিটা পেয়েছে তার ।যেমনটা দুজনে ভেবেছিল ঠিক তেমনই হয়েছে তাদের ভালবাসার ফলসটি..... পিপ পিপ..পপ পপ...তন্দ্রা ছুটে গেছে অবন্তির গাড়ির একটানা হর্ণে । ভাবনায় ছেদ পড়তেই বিরক্তভাবটা আবার ফিরে এলো ।ভাবনাগুলো এত জীবন্ত ছিল যে....ইশঃ মেয়েটার নামটাও রাখা হলো না ! আবার পরক্ষনেই হেসে ফেলল,কল্পনা ছিল এটা ভেবে । আশেপাশে চাইলো,জ্যাম এখনো আগের মতই ।কি ব্যাপার আজ কি হলো ?এত জ্যাম ক্যান ? -মামা কি হয়েছে ?এত জ্যাম কেনো আজ ? সিএনজি ওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো অবন্তি । -আপা,সামনে একটা একসিডেন্ট হইসে ।লোকজন রাস্তা আটকাইয়া রাখসে,সাথে পুলিশ ও আছে । এটা নতুন না ।ঢাকা শহরের প্রায়ই যেকোন যানের চালককে মামা বললে,চালক যাত্রীকে মেয়ে আপা ডাকবে !!! পার্স থেকে মোবাইলটা বের করে আনন্দকে কল দিল । "দুঃখিত ,এই মুহূর্তে আপনার কাঙ্খিত নাম্বারে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না..!" ১বার..২বার..বারংবার একই যান্ত্রিক কন্ঠে একই বাক্য ! হঠাত্‍ কেমন করে উঠলো মনটা ।আগে ও বেশ ক'বার এমন বন্ধ ছিল আনন্দের মোবাইল । কোন বিপদ হয়েছে এমন আশংকায় দেখা যেতো ঠিকই তার একটা না একটা সমস্যা হয়েছে । -না,না,কি ভাবছি এইসব !সবসময়ই এক হবে এমন কোন কথা নেই ।ধূর.... আপনমনেই বলা আপন সান্তনার বাণী অহেতুক ঠেকলো । জোর করে দুঃশ্চিন্তাটাকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করলো । কিন্তু মন বড়ই আজিব !যেকোন চিন্তার ঘটনায় আগে সবসময় খারাপ চিন্তাটিই মাথায় ও মনে আসে। দীর্ঘ দেড়ঘন্টা যাবত্‍ পর জ্যাম মুক্ত হয়েছে। যাওয়ার সময় খেয়াল করলো অবন্তি,রাজপথ রক্তে রঞ্জিত। মনটা খারাপ হয়ে গেলো,কে জানে কার তাজা রক্ত আজ রাজপথ রাঙ্গিয়েছে???? সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসে আছে অবন্তি।তাদের চিরচেনা সেই জারুল গাছটির নিচে... অপেক্ষার প্রহর বড়ই কঠিন।সেই কখন থেকে বসে আছে,আনন্দের কোন খোঁজ নেই!! মোবাইলও বন্ধ!এটা কোন কথা হল!!...... এইদিকে বৃষ্টি থামার পর খোলা রাস্তায় নেমে এসেছিল আনন্দ । গাড়িতে উঠবে বলে দাঁড়িয়ে ছিল বাস স্টপে । একটার পর একটা গাড়ি এসে চলে যাচ্ছে।কিন্তু গতি এতো বেশি দৌড়ে গিয়েও উঠা সম্ভব হচ্ছে না। একসাইডে দাঁড়িয়ে ছিল সে ।কারন ঢাকা শহরের গাড়ি চালকদের জানা আছে তার। কেমন বেপরোয়া গাড়ি চালায় এরা;যেন এক একজন এক বোতল ভায়াগ্রা একাই খেয়ে গাড়ি চালায়!!!! পকেট থেকে মোবাইলটা সবে বের করেছে মাত্র,অবন্তিকে কল দিবে। হটাত কোথা হতে একটা বাস এসে পড়লো...!!! আনন্দের চোখ ছিল মোবাইলের স্ক্রিনে।মুখ তুলেছে উপরের দিকে, ঘাড় ঘুরিয়ে কিছু দেখার আগেই...... শেষবারের মত মা এবং অবন্তির মুখটিই ভেসে উঠেছিল একবার বন্ধ চোখের পাতায়...... অবন্তির দেখা সেই তাজা রক্ত গুলো আর কারো নয়,তার ভালোবাসারই ছিল!!! সেদিন আনন্দের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। সবকিছু অজানা অবন্তি এখনো বসে আছে সেই জারুল গাছটির নিচে অধীর আগ্রহে। তার ভালবাসা আসবে বলে.........

No comments:

Post a Comment

 

Sample text

Sample Text

Sample Text

 
Blogger Templates