আমার নাম লাবণ্য।আমার জীবনটা খুব অদ্ভুত ভাবেই বদলে গেছে এই কয়টা মাসে । ভীষণ দুষ্ট আর
অগোছালো আমি এখন বেশ শান্ত শিষ্ট । অকারণে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়া একটা
মেয়ে বেশ ভাব নিয়ে চলে গম্ভীর ভাবে । আমার এই বদলে যাওয়াটার কারণ মাঝে
মাঝে অনুসন্ধান করার চেষ্টা করি । কিন্ত পারি না । হয়তবা ওই দিনের অই
ঘটনাই আমাকে একদিনে অনেক বড় করে দিয়েছে । ছোট এক শহরের ভীষণ রকমের চঞ্চল
মেয়ে আমি । সারাদিন আড্ডা , গান আর কবিতা । সাথে পড়াশুনার টুকিটাকি ।
সবার আদরের আর পছন্দের মধ্যে আমার বেড়ে
ওঠা । ভাবতে আমি খুব ভালবাসি । চারপাশের মানুষ গুলোর ভালবাসা দেখে আমারও
খুব ভাবতে ইচ্ছে করে কেউ একজন অসম্ভব ভালবাসা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে
। কোন একদিন কেউ একজন তার শার্টের বোতাম লাগিয়ে দেওয়ার জন্য হাঁকডাক
করবে । খুব মমতা নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিবে , আমার পাগলামি দেখে মুচকি মুচকি
হাসবে । ভাবতে ভাবতে লজ্জা পাই নিজে নিজেই । কি যে উলটা পাল্টা ভাবিনা আমি !
বেশ কদিন ধরেই দেখছিলাম ও পাড়ার এক ছেলে পেছন পেছন ঘুরছে । পাত্তা দিতাম
না । একদিন সামনা সামনি প্রস্তাব ও দিয়ে বসে পথ আটকে । এড়িয়ে গেলাম ।
এমনিতেই ওই ছেলের গুন্ডা গুন্ডা ভাব আমার একটু ও পছন্দ না । বলে গেল দেখে
নিবে ।কি এমন দেখে নিবে ? আমার বয়েই গেল ! সেদিন খুব ক্লান্ত নির্জন একটা
দুপুরে প্রতিদিনকার মতই বের হয়েছিলাম কোচিং এ যাওয়ার জন্য । কাঁধে মোটা
ক্যাম্বিসের ব্যাগ নিয়ে , কানে হেডফোন গুজে দিয়ে একমনে হাঁটছিলাম । পথে
যাওয়ার সময় একটা কাঠ বাদাম গাছ পড়ে । বড় বড় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে
ছোট ছোট বাদাম দেখতে মন্দ লাগে না । ওইদিন ওখানে যেতেই হটাত করে আমার সামনে
কিছু মানুষ এসে পড়ে । কিছু বোঝার আগেই আমাকে ওরা ধরে ফেললো । চিৎকার দিতে
গিয়ে পারলাম না । মুখে হাত চেপে দিয়ে নিয়ে গেল রাস্তার ওই নির্জন
পাশটায় । আমি প্রাণপণে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করছিলাম । আস্তে আস্তে
শরীরের সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেল । আমি ওই আঁধারে তলিয়ে গেলাম একসময় ।
শুধু চোখ বন্ধ হওয়ার আগে ওদের মুখে দেখলাম নিষ্ঠুর পাশবিক একটা হাসি । যখন
চোখ মেললাম , তখন প্রায় রাত নেমে এসেছে । ওরা আমার শরীরটাকে নিয়ে ইচ্ছে
মত খেলে ফেলে গেছে । খুব কষ্ট করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম । পারলাম না ।
ধুপ করে পড়ে গেলাম । তারপরও খুব কষ্ট করে হাতড়ে হাতড়ে বাড়ি ফিরে গেলাম
। বাড়ির সবাই আমার অবস্থা দেখে আঁতকে উঠল । মা আমাকে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে
উঠলেন । বাবা অস্থির ভাবে পায়চারি করছেন আর বলছেন , 'এটা ভাল হল না । '
আমি কিছু বলতে পারছিলাম না । নির্বাক হয়ে শুধু তাকিয়ে ছিলাম ওদের দিকে ।
তারপর থেকে শুরু হল আমার বিবর্ণ দিন গুলো । আশেপাশের মানুষ গুলোর আমাকে
দেখে ফিসফিসানি , মুখ টিপে হাসা , সুযোগ পেলেই বাসায় এসে কথা শুনানো - এসব
শুনতে শুনতে নিজের উপর বিতৃষ্ণা চলে আসছে । ওইদিন বাবাও আমাকে দোষ দিল ।
আমি ই নাকি আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী । খুব ছোট মনে হল তখন নিজেকে । ভীষণ
ক্ষুদ্র , নোংরা ! মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে মরে গিয়ে সবাইকে মুক্তি দিই ।
পারিনা । হেরে যেতে ইচ্ছে করে না আমার ।ইচ্ছে করে ওই পশু গুলোকে খুন করে
আসতে । নিজের মাঝে যখন নতুন কার অস্তিত্ব টের পেলাম তখন ও নিজেকে খুব শক্ত
করে রেখেছিলাম । আমি ভেঙ্গে পড়বো না , আমি জীবন কে জীবনের মতনই চলতে দেবো ।
নাই বা হল কোন এক জন সুপুরুষের সাথে দেখা , নাই বা হল ভালবাসাবাসি । জীবনে
কিছু থেমে থাকবে না । কারণ - জীবন এক অপরাজেয় কবিতা ।
Monday, November 30, 2015
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment