Ads 468x60px

Monday, November 30, 2015

আমার নাম লাবণ্য।আমার জীবনটা খুব অদ্ভুত ভাবেই বদলে গেছে এই কয়টা মাসে । ভীষণ দুষ্ট আর অগোছালো আমি এখন বেশ শান্ত শিষ্ট । অকারণে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়া একটা মেয়ে বেশ ভাব নিয়ে চলে গম্ভীর ভাবে । আমার এই বদলে যাওয়াটার কারণ মাঝে মাঝে অনুসন্ধান করার চেষ্টা করি । কিন্ত পারি না । হয়তবা ওই দিনের অই ঘটনাই আমাকে একদিনে অনেক বড় করে দিয়েছে । ছোট এক শহরের ভীষণ রকমের চঞ্চল মেয়ে আমি । সারাদিন আড্ডা , গান আর কবিতা । সাথে পড়াশুনার টুকিটাকি । সবার আদরের আর পছন্দের মধ্যে আমার বেড়ে ওঠা । ভাবতে আমি খুব ভালবাসি । চারপাশের মানুষ গুলোর ভালবাসা দেখে আমারও খুব ভাবতে ইচ্ছে করে কেউ একজন অসম্ভব ভালবাসা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে । কোন একদিন কেউ একজন তার শার্টের বোতাম লাগিয়ে দেওয়ার জন্য হাঁকডাক করবে । খুব মমতা নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিবে , আমার পাগলামি দেখে মুচকি মুচকি হাসবে । ভাবতে ভাবতে লজ্জা পাই নিজে নিজেই । কি যে উলটা পাল্টা ভাবিনা আমি ! বেশ কদিন ধরেই দেখছিলাম ও পাড়ার এক ছেলে পেছন পেছন ঘুরছে । পাত্তা দিতাম না । একদিন সামনা সামনি প্রস্তাব ও দিয়ে বসে পথ আটকে । এড়িয়ে গেলাম । এমনিতেই ওই ছেলের গুন্ডা গুন্ডা ভাব আমার একটু ও পছন্দ না । বলে গেল দেখে নিবে ।কি এমন দেখে নিবে ? আমার বয়েই গেল ! সেদিন খুব ক্লান্ত নির্জন একটা দুপুরে প্রতিদিনকার মতই বের হয়েছিলাম কোচিং এ যাওয়ার জন্য । কাঁধে মোটা ক্যাম্বিসের ব্যাগ নিয়ে , কানে হেডফোন গুজে দিয়ে একমনে হাঁটছিলাম । পথে যাওয়ার সময় একটা কাঠ বাদাম গাছ পড়ে । বড় বড় সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট বাদাম দেখতে মন্দ লাগে না । ওইদিন ওখানে যেতেই হটাত করে আমার সামনে কিছু মানুষ এসে পড়ে । কিছু বোঝার আগেই আমাকে ওরা ধরে ফেললো । চিৎকার দিতে গিয়ে পারলাম না । মুখে হাত চেপে দিয়ে নিয়ে গেল রাস্তার ওই নির্জন পাশটায় । আমি প্রাণপণে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করছিলাম । আস্তে আস্তে শরীরের সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেল । আমি ওই আঁধারে তলিয়ে গেলাম একসময় । শুধু চোখ বন্ধ হওয়ার আগে ওদের মুখে দেখলাম নিষ্ঠুর পাশবিক একটা হাসি । যখন চোখ মেললাম , তখন প্রায় রাত নেমে এসেছে । ওরা আমার শরীরটাকে নিয়ে ইচ্ছে মত খেলে ফেলে গেছে । খুব কষ্ট করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম । পারলাম না । ধুপ করে পড়ে গেলাম । তারপরও খুব কষ্ট করে হাতড়ে হাতড়ে বাড়ি ফিরে গেলাম । বাড়ির সবাই আমার অবস্থা দেখে আঁতকে উঠল । মা আমাকে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন । বাবা অস্থির ভাবে পায়চারি করছেন আর বলছেন , 'এটা ভাল হল না । ' আমি কিছু বলতে পারছিলাম না । নির্বাক হয়ে শুধু তাকিয়ে ছিলাম ওদের দিকে । তারপর থেকে শুরু হল আমার বিবর্ণ দিন গুলো । আশেপাশের মানুষ গুলোর আমাকে দেখে ফিসফিসানি , মুখ টিপে হাসা , সুযোগ পেলেই বাসায় এসে কথা শুনানো - এসব শুনতে শুনতে নিজের উপর বিতৃষ্ণা চলে আসছে । ওইদিন বাবাও আমাকে দোষ দিল । আমি ই নাকি আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী । খুব ছোট মনে হল তখন নিজেকে । ভীষণ ক্ষুদ্র , নোংরা ! মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে মরে গিয়ে সবাইকে মুক্তি দিই । পারিনা । হেরে যেতে ইচ্ছে করে না আমার ।ইচ্ছে করে ওই পশু গুলোকে খুন করে আসতে । নিজের মাঝে যখন নতুন কার অস্তিত্ব টের পেলাম তখন ও নিজেকে খুব শক্ত করে রেখেছিলাম । আমি ভেঙ্গে পড়বো না , আমি জীবন কে জীবনের মতনই চলতে দেবো । নাই বা হল কোন এক জন সুপুরুষের সাথে দেখা , নাই বা হল ভালবাসাবাসি । জীবনে কিছু থেমে থাকবে না । কারণ - জীবন এক অপরাজেয় কবিতা ।

No comments:

Post a Comment

 

Sample text

Sample Text

Sample Text

 
Blogger Templates