সময়ের অপেক্ষা

সব কিছুর একটা সময় আছে শুভ্র জানে। তবে আর কত দিন সেই সময়ের অপেক্ষা করতে হবে তা শুভ্রের জানা নেই। একটু পরে বন্ধুদের সাথে হয়তো অনেকটা দূরেই যাবে, ফিরবে কবে তা না জানা নেই। একটা চিঠির উত্তর দেয়া খুব দরকার তবে সাদা কাগজ না পাঠানোই ভালো। তাই সেটিও শুভ্র রেখে দিয়েছে, সঠিক সময়ের অপেক্ষায়।। গাড়িটা এসি হলেও শুভ্র বলে অফ করিয়েছে। তপু ওর কথায় কখনো অমত করেনি। হাতের কনুইটা জানালার বাইরে রেখে শুভ্র ভাবছে। পিছনে বসা ছেলেগুলো শুভ্রের চেনা নয়। একজনকে আগে দেখেছে। বাকিদের সম্পর্কে সঠিক কিছু বলতে পারবে না। তপু সাথে মাঝে মাঝেই বেড়িয়ে পড়ে শুভ্র। তবে এতো অপরিচিতদের মাঝে আগে কখনো পড়েনি। শুনেছে যে আরও অনেকেই আসছে। তাদের চিনবে বলেও শুভ্র আশা করে না।ঘরটা শুভ্রের অনেক পছন্দ। সূর্যের আলোটা সোজা ঘরে এসে পড়ে। তপুর তা পছন্দ না হলেও এ ঘরটাতেই থাকে। তপুদের ফার্ম হাউসটা বিশাল। দো’তলার এই ঘরটিতে এসেই তপু গড়িয়ে পড়েছে। বাকিরাও হয়তো যে যার ঘরে। আরও যাদের আসার কথা তারা এখনো আসেনি। শুভ্রের কলমটা ওর ডায়েরির অপেক্ষায় ছিল। লেখা শেষে শুভ্র গোসলটা সেড়ে নেয়, চেনা পরিবেশে অচেনা হয়ে যায়।অনেক বলার পরেও শুভ্র নিচে নামতে রাজি হয় না। তপু একটা পার্টির আয়োজন করেছে। গানের শব্দ না শুনে উপায় নেই। শুভ্রের বাংলা গান ছাড়া ভালো লাগে না। নিজের গিটারটা নিয়ে টুং টাং করতেই চোখ পড়লো নিচের পরিপাটি আয়োজনে। জানালা দিয়ে পুরোটাই দেখা যায়। অনেক মানুষ সেখানে। শুভ্রের চেনা কেউ নেই। না গিয়ে কিছুটা ভালোই করেছে।দূর থেকে মানুষের চলাফেরা দেখলে কিছু অভিজ্ঞতা হয়। শুভ্র তার একলা অধিকারী। যেমন একটি ছেলে গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত মুখে দেয়নি। শুভ্র বাদে হয়তো তা কারো চোখে পড়েনি। কাউকে দেখে থমকে যাওয়ার মতো ছেলে শুভ্র না। তবে হঠাৎ আর চোখ সরাতে পারলো না। সবার সাথে বেশ আনন্দে মেতে আছে মেয়েটি। তার দিকে তাকিয়ে থাকাই যেতো তবে সে যে এতো তাড়াতাড়ি উপরে তাকাবে শুভ্রের তা জানা ছিল না। সময়ের অপেক্ষাটা হয়তো একটু বেশিই লম্বা।গিটারটা রেখে শুভ্র তার কলমটাকে সঙ্গী করে নিল। রাত গভীর পার্টিটা চলছিল। মাঝে তপু বার’কয়েক এলেও শুভ্র এর মন ভাঙ্গেনি। সে নিচে যায়নি। সে তার মতই ঘরে রয়ে গেছে। ঘুমাবার জন্য এতদূর না এলেও হত। এই ভেবে শুভ্রের আর ঘুম হল না।দরজার শব্দ শুনেই শুভ্র তপুর উপস্থিতি আশা করল। আশার আলো নিভিয়ে সেই মেয়েটির আগমন শুভ্রের ভাবনায়ও ছিল না। ঠিকমত হাঁটতে না পারলেও দুলতে দুলতে মেয়েটি কাছে এসে দাঁড়ালো। মুখের উপর সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে ধপাস করে পড়ে গেলো। শুভ্র এর জানা ছিল সময়টা এখন তার নয়। তাই তো পাশে পেয়েও বলা হলো না কথা, হলো না পরিচয়।ঘুম থেকে উঠেই শুভ্রকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখার আশা হয়তো মেয়েটি করেনি। তবে সব মনে পড়ায় তার দুঃখিত হবার চেষ্টা শুভ্রের ভালো লাগে। কফির মগটা হাতে দিয়ে শুভ্র বেড়িয়ে যায় নামটা তার অজানাই থাকলো। নিচে নেমে অবশ্য মেয়েটিকে জানালায় দেখা গেছে। তবে এ নিয়ে আর শুভ্র ভাবেনি।দরজায় পড়ে থাকা চিঠিটা শুভ্রকে ফিরিয়ে আনলো। তপু বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে গেছে। শহরের এই বদ্ধ ঘরে শুভ্র ফিরে আসতে চায়নি। মায়ের কাছে এবার উত্তর দিতেই হবে। ভাবনার সেই ধোঁয়াটে মধ্যরাত থেকে বেড়িয়ে গুছিয়ে চিঠিটা লিখতেই হবে। দরজায় কে যেন এসেছে। বাড়িওয়ালা আবারো টাকা চাইবেন।।
No comments:
Post a Comment